ছেলেরা। বা, বা, বা, কী চমৎকার খেলনা! এ যে জাহাজ! এ যে জটাইবুড়ি! দেখছিস ভাই? কেমন সুন্দর সেপাই! —এ-সব তুমি আমাদের দিয়ে দিলে? তোমার কষ্ট হচ্ছে না?
অমল। না, কিছু কষ্ট হচ্ছে না, সব তোমাদের দিলুম।
ছেলেরা। আর কিন্তু ফিরিয়ে দেব না।
অমল। না, ফিরিয়ে দিতে হবে না।
ছেলেরা। কেউ তো বকবে না?
অমল। কেউ না, কেউ না। কিন্তু রোজ সকালে তোমরা এই খেলনাগুলো নিয়ে আমার এই দরজার সামনে খানিকক্ষণ ধরে খেলো। আবার এগুলো যখন পুরোনো হয়ে যাবে আমি নতুন খেলনা আনিয়ে দেব।
ছেলেরা। বেশ ভাই, আমরা রোজ এখানে খেলে যাব। ও ভাই, সেপাইগুলোকে এখানে সব সাজা —আমরা লড়াই-লড়াই খেলি। বন্দুক কোথায় পাই? ঐ-যে একটা মস্ত শরকাঠি পড়ে আছে —ঐটেকে ভেঙে ভেঙে নিয়ে আমরা বন্দুক বানাই। কিন্তু ভাই, তুমি যে ঘুমিয়ে পড়ছ!
অমল। হাঁ, আমার ভারি ঘুম পেয়ে আসছে। জানি নে কেন আমার থেকে থেকে ঘুম পায়। অনেকক্ষণ বসে আছি আমি, আর বসে থাকতে পারছি নে —আমার পিঠ ব্যথা করছে।
ছেলেরা। এখন যে সবে এক প্রহর বেলা —এখনই তোমার ঘুম পায় কেন? ঐ শোনো এক প্রহরের ঘণ্টা বাজছে।
অমল। হাঁ, ঐ যে বাজছে ঢং ঢং ঢং —আমাকে ঘুমোতে যেতে ডাকছে।
ছেলেরা। তবে আমরা এখন যাই, আবার কাল সকালে আসব।
অমল। যাবার আগে তোমাদের একটা কথা আমি জিজ্ঞাসা করি ভাই। তোমরা তো বাইরে থাক, তোমরা ঐ রাজার ডাকঘরের ডাক-হরকরাদের চেন?
ছেলেরা। হাঁ চিনি বৈকি, খুব চিনি।
অমল। কে তারা, নাম কী?
ছেলেরা। একজন আছে বাদল হরকরা, একজন আছে শরৎ —আরো কত আছে।
অমল। আচ্ছা, আমার নামে যদি চিঠি আসে তারা কি আমাকে চিনতে পারবে?
ছেলেরা। কেন পারবে না? চিঠিতে তোমার নাম থাকলেই তারা তোমাকে ঠিক চিনে নেবে।
অমল। কাল সকালে যখন আসবে তাদের একজনকে ডেকে এনে আমাকে চিনিয়ে দিয়ো না।
ছেলেরা। আচ্ছা দেব।