
। | । |
ভবানীর কটুভাষে। | লজ্জা হৈল কীর্তিবাসে, |
। | । |
ক্ষুধানলে কলেবর। | দহে। |
তৃতীয় পদে দুটা মাত্রা বেশি আছে; তাহার কারণ, যে চতুর্থ পদটি থাকিলে এই ছন্দের ভারসামঞ্জস্য থাকিত সেটি নাই। ‘ক্ষুধানলে কলেবর’ পর্যন্ত আসিয়া থামিতে গেলে ছন্দটা কাত হইয়া পড়ে এইজন্য ‘দহে’ একটা যোগ করিয়া ছোটো একটি ঠেকা দিয়া উহাকে খাড়া রাখা হইয়াছে। চতুষ্পদ জন্তুর পায়ের তেলোটা চওড়া হয় না, কিন্তু মানুষের খাড়া শরীরের টল্টলে ভারটা দুই পায়ের পক্ষে বেশি হওয়াতেই তাহার পদতলটা গোড়ালি ছাড়াইয়া সামনের দিকে খানিকটা বিস্তীর্ণ; সেইটুকুই ত্রিপদীর ঐ শেষ দুটো অতিরিক্ত মাত্রা।
এইরূপ অনেকগুলি ছন্দ দেখা যায় যাহাতে খানিকটা করিয়া বড়ো মাত্রাকে একটি করিয়া ছোটো মাত্রা দিয়া বাধা দিবার কায়দা দেখা যায়। দশ মাত্রার ছন্দ তাহার দৃষ্টান্ত। ইহার ভাগ আট + দুই, অথবা চার + চার + দুই –
। | । | । |
মোর পানে। | চাহ মুখ। | তুলি, |
। | । | । |
পরশিব। | চরণের। | ধূলি। |
ছয়া মাত্রার ছন্দেও এরূপ বড়ো-ছোটোর ভাগ চলে। সেই ভাগ ছয় + দুই অথবা তিন + তিন + দুই। যেমন–
আঁখিতে। মিলিল। আঁখি।
হাসিল। বদন। ঢাকি।
মরম- বারতা শরমে মরিল
কিছু না রহিল বাকি।
উক্ত ছন্দে তিনের দল বুক ফুলাইয়া জুড়ি মিলাইয়া চলিতেছিল, হঠাৎ মাঝে-মাঝে একটা খাপছাড়া দুই আসিয়া তাহাদিগকে বাধা দিয়াছে। এইরূপে গতি ও বাধার মিলনে ছন্দের সংগীত একটু বিশেষ ভাবে বাজিয়া উঠিয়াছে। এই বাধাটি গতির অনুপাতে ছোটো হওয়া চাই। কারণ, বড়ো হইলে সে বাধা সত্য হয়, এবং গতিকে আবদ্ধ করে, সেটা ছন্দের পক্ষে দুর্ঘটনা। তাই উপরের দুটোই দৃষ্টান্তে দেখিয়াছি চারের দল ও তিনের দলকে দুই আসিয়া রোধ করিয়াছে, সেইজন্য ইহা বন্ধনের অবরোধ নহে, ইহা লীলার উপরোধ। দুইয়ের পরিবর্তে এক হইলেও ক্ষতি হয় না। যেমন–
। | । | । |
প্রতিদিন হায়। | এসে ফিরে যায়। | কে। |
অথবা–
। | । | । |
মুখে তার। | নাহি আর। | রা। |