
তাতে দোষ হয়েছে কী। বিষয়টা তো উপাদেয়, যাকে বলে ইণ্টারেস্টিঙ।
বিষয়টা সর্বদাই রয়েছে সামনে। তাকে তো স্মরণ করবার দরকার হয় না। তাকে যে ভোলাই শক্ত।
আচ্ছা, তা হলে মাস্টারের একটা বিশেষ পরিচয় দিই তোমাকে। এটা টুকে রাখবার যোগ্য। একদিন সন্ধেবেলায় মাস্টার জনকয়েক লোককে নেমন্তন্ন করেছিল। খবরটা তার মনে আছে কি না জানবার জন্যে সকাল - সকাল গেলুম তার বাড়িতে। সেবক কানাইয়ের সঙ্গে তার যে আলোচনাটা চলছিল, বলি সে কথাটা। কানাই বললে, জগদ্ধাত্রীপুজোর বাজারে গলদা চিংড়ির দাম চড়ে গেছে, তাই এনেছি ডিমওয়ালা কাঁকড়া।
মাস্টার ঈষৎ চিন্তিত হয়ে বলে, কাঁকড়া কী হবে।
ও বললে, লাউ দিয়ে ঝোল, সে তোফা হবে।
আমি বললুম, মাস্টার, গল্দা চিংড়ির উপর তোমার লোভ ছিল?
মাস্টার বললে, ছিল বৈকি।
তা হলে তো লোভ সংবরণ করতে হবে।
তা কেন। লোভটা প্রস্তুত হয়েই আছে, তাকে শাণ্ট্ করে চালিয়ে দেব কাঁকড়ার লাইনে।
দেখছি, তোমাকে বিস্তর শাণ্ট্ করতে হয়।
মাস্টার বললে, কাঁকড়ার ঝোল তো খেয়েছি অনেকবার, সম্পূর্ণ মন দিই নি। এবার যখন দেখলুম কানাইয়ের জিভে জল এসেছে, তখন তার সিক্ত রসনার নির্দেশে খাবার সময় মনটা ঝুঁকে পড়বে কাঁকড়ার দিকে, রসটা পাব বেশি করে। কাঁকড়ার ঝোলটাকে ও যেন লাল পেন্সিলে আণ্ডর্লাইন করে দিলে ; ওটাকে ভালো করে মুখস্থ করবার পক্ষে সুবিধে হল আমার।
মাস্টার জিগেস করলে, আঁঠি - বাঁধা ওটা কী এনেছিস।
কানাই বললে, সজনের ডাঁটা।
মাস্টার সগর্বে আমার দিকে চেয়ে বললে, এই দেখো মজা। ও বাজারে যাবার সময় আমার মনে ছিল লাউডগা। ও বাজার থেকে ফিরে এল, আমি পেয়ে গেলুম সজনের ডাঁটা। হুকুম না করবার এই সুবিধে।
আমি বললুম, সজনের ডাঁটা না এনে ও যদি আনত চিচিঙ্গে?
মাস্টার জবাব দিলেন, তা হলে ক্ষণকালের জন্যে ভাবনা করতে হত। নাম জিনিসটার প্রভাব আছে। চিচিঙ্গে শব্দটা লোভজনক নয়। কিন্তু, কানাই যদি ওটা বিশেষ করে বাছাই করে আনত, তা হলে সংস্কার কাটাবার একটা উপলক্ষ হত। জীবনে সব - প্রথমে ভেবে দেখবার সুযোগ হত ‘দেখাই যাক - না' ; হয়তো আবিষ্কার করতুম, ওটা মন্দ চলে না। চিচিঙ্গে পদার্থটার বিরুদ্ধে অন্ধ বিরাগ দূর হয়ে উপভোগ্যের সীমানা বেড়ে যেত। এমনি করেই কাব্যে কবিরা তো নিজের রুচিতে আমাদের রুচির প্রসার বাড়িয়ে দিচ্ছে। সৃষ্টিকে আণ্ডর্লাইন করাই তাদের কাজ।
তোমার রুচির প্রসার বাড়াবার কাজে কানাইয়ের আরো এমন হাত আছে?
আছে বৈকি। ও না থাকলে পিড়িং শাকে আমি কোনোদিন মনোযোগই দিতুম না। শব্দটা আমাকে মারত ধাক্কা। সংসারে সংস্কারমুক্তিই তো অধিকারব্যাপ্তি।
সেই মহৎ কাজে আছে তোমার কানাই।
তা মানতে হবে, ভাই। ওর ইচ্ছার যোগে আমার ইচ্ছার সংকীর্ণতা ঘুচে যায় প্রতিদিন। আমি একলা থাকলে এমনটা ঘটত