প্রস্তুত হইল বাঁধি জিনিস-পত্তর,
প্রণমিয়া গুরুজনে, সখীদলবলে
ভাসাইয়া বিদায়ের শোক-অশ্রুজলে।
ঘাটে আসি দেখে—সেথা আগেভাগে ছুটি
রাখাল বসিয়া আছে তরী-’পরে উঠি
নিশ্চিন্ত নীরবে। ‘তুই হেথা কেন ওরে’
মা শুধালো; সে কহিল, ‘যাইব সাগরে।’
‘যাইবি সাগরে! আরে, ওরে দস্যু ছেলে,
নেমে আয়।’ পুনরায় দৃঢ় চক্ষু মেলে
সে কহিল দুটি কথা, ‘যাইব সাগরে।’
যত তার বাহু ধরি টানাটানি করে
রহিল সে তরণী আঁকড়ি। অবশেষে
ব্রাহ্মণ করুণ স্নেহে কহিলেন হেসে,
‘থাক্ থাক্ সঙ্গে যাক্।’ মা রাগিয়া বলে
‘চল্ তোরে দিয়ে আসি সাগরের জলে!’
যেমনি সে কথা গেল আপনার কানে
অমনি মায়ের বক্ষ অনুতাপবাণে
বিঁধিয়া কাঁদিয়া উঠে। মুদিয়া নয়ন
‘নারায়ণ নারায়ণ’ করিল স্মরণ।
পুত্রে নিল কোলে তুলি, তার সর্বদেহে
করুণ কল্যাণহস্ত বুলাইল স্নেহে।
মৈত্র তারে ডাকি ধীরে চুপি চুপি কয়,
‘ছি ছি ছি এমন কথা বলিবার নয়।’
রাখাল যাইবে সাথে স্থির হল কথা—
অন্নদা লোকের মুখে শুনি সে বারতা
ছুটে আসি বলে, ‘বাছা, কোথা যাবি ওরে!’
রাখাল কহিল হাসি, ‘চলিনু সাগরে,
আবার ফিরিব মাসি!’ পাগলের প্রায়
অন্নদা কহিল ডাকি, ‘ঠাকুরমশায়,
বড়ো যে দুরন্ত ছেলে রাখাল আমার,
কে তাহারে সামালিবে? জন্ম হতে তার