পঞ্চক। সর্বনাশের বাজনা বাজলেই নাচ শুরু হয় দাদা।
মহাপঞ্চক। চুপ কর্ লক্ষ্মীছাড়া! ছাত্রগণ, তোমরা আত্মবিস্মৃত হোয়ো না। ঘোর বিপদ আসন্ন, সে কথা স্মরণ রেখো।
বিশ্বম্ভর। আচার্যদেব, পায়ে ধরি, সুভদ্রকে আমাদের হাতে দিন, তাকে তার প্রায়শ্চিত্ত থেকে নিরস্ত করবেন না।
আচার্য। না বৎস, এমন অনুরোধ কোরো না।
সঞ্জীব। ভেবে দেখুন, সুভদ্রের কতবড়ো ভাগ্য। মহাতামস ক-জন লোকে পারে। ও-যে ধরাতলে দেবত্ব লাভ করবে!
আচার্য। গায়ের জোড়ে দেবতা গড়বার পাপে আমাকে লিপ্ত কোরো না। সে মানুষ, সে শিশু, সেই জন্যেই সে দেবতাদের প্রিয়।
জয়োত্তম। দেখুন, আপনি আমাদের আচার্য, আমাদের প্রণম্য, কিন্তু যে অন্যায় কাজ করছেন, তাতে আমরা বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হব।
আচার্য। করো, বলপ্রয়োগ করো, আমাকে মেনো না, আমাকে মারো, আমি অপমানেরই যোগ্য, তোমাদের হাত দিয়ে আমার যে শাস্তি আরম্ভ হল, তাতেই বুঝতে পারছি গুরুর আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু সেই জন্যেই বলছি শাস্তির কারণ আর বাড়তে দেব না। সুভদ্রকে তোমাদের হাতে দিতে পারব না।
বিশ্বম্ভর। পারবেন না?
আচার্য। না।
মহাপঞ্চক। তা হলে আর দ্বিধা করা নয়। বিশ্বম্ভর, এখন তোমাদের উচিত ওঁকে জোর করে ধরে নিয়ে ঘরে বন্ধ করা। ভীরু, কেউ সাহস করছ না? আমাকেই তবে এ কাজ করতে হবে?
জয়োত্তম। খবরদার —আচার্যদেবের গায়ে হাত দিতে পারবে না।
বিশ্বম্ভর। না না, মহাপঞ্চক, ওঁকে অপমান করলে আমরা সইতে পারব না।
সঞ্জীব। আমরা সকলে মিলে পায়ে ধরে ওঁকে রাজি করাব। একা সুভদ্রের প্রতি দয়া করে উনি কি আমাদের সকলের অমঙ্গল ঘটাবেন?
বিশ্বম্ভর। এই অচলায়তনের এমন কত শিশু উপবাসে প্রাণত্যাগ করেছে —তাতে ক্ষতি কী হয়েছে!
সুভদ্র। আমাকে মহাতামস ব্রত করাও।
পঞ্চক। সর্বনাশ করলে! ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে আমি এখানে এসেছিলুম কখন জেগে উঠে চলে এসেছে।
আচার্য। বৎস সুভদ্র, এস আমার কোলে। যাকে পাপ বলে ভয় করছ সে পাপ আমার —আমিই প্রায়শ্চিত্ত করব।
বিশ্বম্ভর। না না, আয় রে আয় সুভদ্র, তুই মানুষ না, তুই দেবতা।
সঞ্জীব। তুই ধন্য।
বিশ্বম্ভর। তোর বয়সে মহাতামস করা আর কারো ভাগ্যে ঘটে নি। সার্থক তোর মা তোকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন।
উপাধ্যায়। আহা সুভদ্র, তুই আমাদের অচলায়তনেরই বালক বটে।
মহাপঞ্চক। আচার্য, এখনো কি তুমি জোর করে এই বালককে এই মহাপূণ্য থেকে বঞ্চিত করতে চাচ্ছ?
আচার্য। হায় হায়, এই দেখেই তো আমার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তোমরা যদি ওকে কাঁদিয়ে আমার হাত থেকে ছিঁড়ে