Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)


বড়ো খবর, ২
বড়ো খবর

কুসমি বললে, তোমার বড়ো খবর এইটুকু বৈ নয়? তুমি ঠাট্টা করছ।

দাদামশায় বললে, ঠাট্টার মতন এখন শোনাচ্ছে। দেখতে দেখতে একদিন বড়ো খবর বড়ো হয়েই উঠবে।

তখন?

তখন তোমার দাদামশায় ঐ দাঁড়গুলোর সঙ্গে তাল মেলানো অভ্যাস করতে বসবে।

আর, আমি?
যেখানে দাঁড় বড়ো বেশি কচ্‌কচ্‌ করে সেখানে দেবে একটু তেল।

দাদামশায় বললেন, খাঁটি খবর ছোটো হয়েই থাকে, যেমন বীজ। ডালপালা নিয়ে বড়ো গাছ আসে পরে। এখন বুঝেছ তো?

কুসমি বললে, হ্যাঁ, বুঝেছি।

মুখ দেখে বোঝা গেল, বোঝে নি। কিন্তু কুসমির একটা গুণ আছে, দাদামশায়ের কাছে ও সহজে মানতে চায় না যে ও কিছু বোঝে নি। ওর ইরুমাসির চেয়ে ও বুদ্ধিতে যে কম, এ কথাটা চাপা থাকাই ভালো।

                    *
                *     *
পালের সঙ্গে দাঁড়ের বুঝি গোপন রেষারেষি,
মনে মনে তর্ক করে কার সমাদর বেশি।
দাঁড় ভাবে যে, পাঁচ-ছজনা গোলাম তাহার পাছে,
একলা কেবল বুড়ো মাঝি পালের তত্ত্বে আছে।
পাল ভাবে যে, জলের সঙ্গে দাঁড়ের নিত্য বৈরি,
বাতাসকে তো বক্ষে নিতে আমি সদাই তৈরি;
আমার খাতির মিতার সঙ্গে ভালোবাসার জোরে,
ওরা মরে ঝেঁকে ঝেঁকেই শুধু লড়াই ক’রে—
ওঠে পড়ে পরের খেয়ে তাড়া,
আমি চলি আকাশ থেকে যখনি পাই সাড়া।