দ্বিতীয় দর্ভক। ঠাকুর, সে তুমি শুনে হাসবে।
পঞ্চক। আমিই তো ভাই, এতদিন লোক হাসিয়ে আসছি –তোরা আমাকেও হাসাবি— শুনেও মন খুশি হয়। কিছু ভাবিস নে –নির্ভয়ে শুনিয়ে দে।
প্রথম দর্ভক। আচ্ছা ভাই আয় তবে —গান ধর।
ও অকূলের কূল, ও অগতির গতি,
ও অনাথের নাথ, ও পতিতের পতি।
ও নয়নের আলো, ও রসনার মধু,
ও রতনের হার, ও পরানের বঁধু।
ও অপরূপ রূপ, ও মনোহর কথা,
ও চরমের সুখ, ও মরমের ব্যথা।
ও ভিখারির ধন, ও অবোলার বোল –
ও জনমের দোলা, ও মরণের কোল।
পঞ্চক। দে ভাই, আমার মন্ত্রতন্ত্র সব ভুলিয়ে দে, আমার বিদ্যাসাধ্যি সব কেড়ে নে, দে আমাকে তোদের ঐ গান শিখিয়ে দে।
প্রথম দর্ভক। বাবাঠাকুর, আমাদের সমস্ত পাড়া আজ ত্রাণ পেয়ে গেল। এতদিন তোমার চরণধুলো তো এখানে পড়ে নি।
আচার্য। সে আমার অভাগ্য, সে আমারই অভাগ্য।
দ্বিতীয় দর্ভক। বাবা, তোমার স্নানের জল কাকে দিয়ে তোলাব? এখানে তো –
আচার্য। বাবা, তোরাই তুলে আনবি।
প্রথম দর্ভক। আমরা তুলে আনব –সে কী হয়!
আচার্য। হাঁ বাবা, তোদের তোলা জলে আজ আমার অভিষেক হবে।
দ্বিতীয় দর্ভক। ওরে চল্ তবে ভাই চল্। আমাদের পাটলা নদী থেকে জল আনি গে।
পঞ্চক। মনে হচ্ছে যেন ভিজে মাটির গন্ধ পাচ্ছি, কোথায় যেন বর্ষা নেমেছে।
আচার্য। ঐ, পঞ্চক শুনতে পাচ্ছ কি?
পঞ্চক। কী বলুন দেখি?
আচার্য। আমার মনে হচ্ছে যেন সুভদ্র কাঁদছে।
পঞ্চক। এখান থেকে কি শোনা যাবে? এ বোধ হয় আর কোনো শব্দ।
আচার্য। তা হবে পঞ্চক, আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি। তার কান্নাটা এমন করে আমাকে বেজেছে কেন জান? সে যে কান্না রাখতে পারে না তবু কিছুতে মানতে চায় না সে কাঁদছে।
পঞ্চক। এতক্ষণে ওরা তাকে মহাতামসে বসিয়েছে –আর সকলে মিলে খুব দূরে থেকে বাহবা দিয়ে বলছে, শুভদ্র দেবশিশু।