Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
মানসী - অপেক্ষা, ২
মানসী
নীলাম্বরে অঙ্গ ঘিরে
নেমেছে সেই নিভৃত নীরে,
প্রাচীরে-ঘেরা ছায়াতে-ঢাকা
বিজন ফুলবনে?
ধরেছে তনুখানি।
মধুর দুটি বাহুর ঘায়
অগাধ জল টুটিয়া যায়,
গ্রীবার কাছে নাচিয়া উঠি
করিছে কানাকানি।
তুলেছে রাঙা করি।
মুখের ছায়া পড়িয়া জলে
নিজেরে যেন খুঁজিছে ছলে,
জলের’পরে ছড়ায়ে পড়ে
আঁচল খসি পড়ি।
আপন রূপখানি
শরমহীন আরামসুখে
হাসিটি ভাসে মধুর মুখে,
বনের ছায়া ধরার চোখে
দিয়েছে পাতা টানি।
উদাস বেশবাস।
আধেক কায়া আধেক ছায়া
জলের’পরে রচিছে মায়া,
দেহেরে যেন দেহের ছায়া
করিছে পরিহাস।
নেমেছে সেই নিভৃত নীরে,
প্রাচীরে-ঘেরা ছায়াতে-ঢাকা
বিজন ফুলবনে?
স্নিগ্ধ জল মুগ্ধভাবে
ধরেছে তনুখানি।
মধুর দুটি বাহুর ঘায়
অগাধ জল টুটিয়া যায়,
গ্রীবার কাছে নাচিয়া উঠি
করিছে কানাকানি।
কপোলে তার কিরণ প’ড়ে
তুলেছে রাঙা করি।
মুখের ছায়া পড়িয়া জলে
নিজেরে যেন খুঁজিছে ছলে,
জলের’পরে ছড়ায়ে পড়ে
আঁচল খসি পড়ি।
জলের’পরে এলায়ে দিয়ে
আপন রূপখানি
শরমহীন আরামসুখে
হাসিটি ভাসে মধুর মুখে,
বনের ছায়া ধরার চোখে
দিয়েছে পাতা টানি।
সলিলতলে সোপান-’পরে
উদাস বেশবাস।
আধেক কায়া আধেক ছায়া
জলের’পরে রচিছে মায়া,
দেহেরে যেন দেহের ছায়া
করিছে পরিহাস।