মহাপঞ্চক। তোমরা অত ব্যস্ত হয়ে পড়ছ কেন! কোনো ভয় নেই।
বিশ্বম্ভর। তুমি তো বলছ ভয় নেই, এই-যে খবর এল, শত্রুসৈন্য অচলায়তনের প্রাচীর ফুটো করে দিয়েছে।
মহাপঞ্চক। এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শিলা জলে ভাসে! ম্লেচ্ছরা অচলায়তনের প্রাচীর ফুটো করে দেবে! পাগল হয়েছ?
সঞ্জীব। কে যে বললে দেখে এসেছে।
মহাপঞ্চক। সে স্বপ্ন দেখেছে।
জয়োত্তম। আজই তো আমাদের গুরুর আসবার কথা।
মহাপঞ্চক। তার জন্যে সমস্ত আয়োজন ঠিক হয়ে গেছে; কেবল যে ছেলের মা-বাপ ভাই-বোন কেউ মরে নি এমন নবম গর্ভের সন্তান এখনো জুটিয়ে আনতে পারলে না –দ্বারে দাঁড়িয়ে কে যে মহারক্ষা পড়বে ঠিক করতে পারছি নে।
সঞ্জীব। গুরু এলে তাঁকে চিনে নেবে কে? আচার্য অদীনপুণ্য তাঁকে জানতেন। আমরা তো কেউ তাঁকে দেখি নি।
মহাপঞ্চক। আমাদের আয়তনে যে শাঁখ বাজায় সেই বৃদ্ধ তাঁকে দেখেছে। আমাদের পূজার ফুল যে জোগায় সেও তাঁকে জানে।
বিশ্বম্ভর। ওই যে উপাধ্যায় ব্যস্ত হয়ে ছুটে আসছেন।
মহাপঞ্চক। নিশ্চয় গুরু আসবার সংবাদ পেয়েছেন। কিন্তু মহারক্ষা পাঠের কী করা যায়। ঠিক লক্ষণসম্পন্ন ছেলে তো পাওয়া গেল না।
মহাপঞ্চক। কত দূর?
উপাধ্যায়। কতদূর কী? এসে পড়েছে যে।
মহাপঞ্চক। কই দ্বারে তো এখনো শাঁখ বাজালে না?
উপাধ্যায়। বিশেষ দরকার দেখি নে –কারণ দ্বারের চিহ্নও দেখতে পাচ্ছি নে –ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
মহাপঞ্চক। বল কী, দ্বার ভেঙেছে?
উপাধ্যায়। শুধু দ্বার নয়, প্রাচীরগুলোকে এমনি সমান করে শুইয়ে দিয়েছে যে তাদের সম্বন্ধে আর কোনো চিন্তা করবার নেই। ঐ দেখছ না আলো।
মহাপঞ্চক। কিন্তু আমাদের দৈবজ্ঞ যে গণনা করে স্পষ্ট দেখিয়ে দিয়ে গেল যে –
উপাধ্যায়। তার চেয়ে ঢের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শত্রুসৈন্যদের রক্তবর্ণ টুপিগুলো। এই যে সব ফাঁক হয়ে গেছে।
ছাত্রগণ। কী সর্বনাশ!
সঞ্জীব। কিসের মন্ত্র তোমার মহাপঞ্চক?
বিশ্বম্ভর। আমি তো তখনই বলেছিলুম, এ-সব কাজ এই কাঁচা বয়সের পুঁথিপড়া অকালপক্বদের দিয়ে হবার নয়।