Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
বিদায়-অভিশাপ -১১
বিদায়-অভিশাপ
আপনার কথা। ভালোবাসি কি না আজ
সে তর্কে কী ফল? আমার যা আছে কাজ
সে আমি সাধিব। স্বর্গ আর স্বর্গ বলে
যদি মনে নাহি লাগে, দূর বনতলে
যদি ঘুরে মরে চিত্ত বিদ্ধ মৃগসম,
চিরতৃষ্ণা লেগে থাকে দগ্ধ প্রাণে মম
সর্বকার্য-মাঝে—তবু চলে যেতে হবে
সুখশূন্য সেই স্বর্গধামে। দেব-সবে
এই সঞ্জীবনী বিদ্যা করিয়া প্রদান
নূতন দেবত্ব দিয়া তবে মোর প্রাণ
সার্থক হইবে; তার পূর্বে নাহি মানি
আপনার সুখ। ক্ষমো মোরে, দেবযানী,
ক্ষমো অপরাধ।
দেবযানী । ক্ষমা কোথা মনে মোর।
করেছ এ নারীচিত্ত কুলিশকঠোর
হে ব্রাহ্মণ। তুমি চলে ষাবে স্বর্গলোকে
সগৌরবে, আপনার কর্তব্যপুলকে
সর্ব দুঃখশোক করি দূরপরাহত ;
আমার কী আছে কাজ, কী আমার ব্রত।
আমার এ প্রতিহত নিষ্ফল জীবনে
কী রহিল, কিসের গৌরব? এই বনে
বসে রব নতশিরে নিঃসঙ্গ একাকী
লক্ষ্যহীনা। যে দিকেই ফিরাইব আঁখি
সহস্র স্মৃতির কাঁটা বিঁধিবে নিষ্ঠুর;
লুকায়ে বক্ষের তলে লজ্জা অতি ক্রূর
বারম্বার করিবে দংশন। ধিক্ ধিক্,
কোথা হতে এলে তুমি, নির্মম পথিক,
বসি মোর জীবনের বনচ্ছায়াতলে
দণ্ড দুই অবসর কাটাবার ছলে
জীবনের সুখগুলি ফুলের মতন
ছিন্ন করে নিয়ে, মালা করেছ গ্রন্থন
একখানি সূত্র দিয়ে। যাবার বেলায়
সে তর্কে কী ফল? আমার যা আছে কাজ
সে আমি সাধিব। স্বর্গ আর স্বর্গ বলে
যদি মনে নাহি লাগে, দূর বনতলে
যদি ঘুরে মরে চিত্ত বিদ্ধ মৃগসম,
চিরতৃষ্ণা লেগে থাকে দগ্ধ প্রাণে মম
সর্বকার্য-মাঝে—তবু চলে যেতে হবে
সুখশূন্য সেই স্বর্গধামে। দেব-সবে
এই সঞ্জীবনী বিদ্যা করিয়া প্রদান
নূতন দেবত্ব দিয়া তবে মোর প্রাণ
সার্থক হইবে; তার পূর্বে নাহি মানি
আপনার সুখ। ক্ষমো মোরে, দেবযানী,
ক্ষমো অপরাধ।
দেবযানী । ক্ষমা কোথা মনে মোর।
করেছ এ নারীচিত্ত কুলিশকঠোর
হে ব্রাহ্মণ। তুমি চলে ষাবে স্বর্গলোকে
সগৌরবে, আপনার কর্তব্যপুলকে
সর্ব দুঃখশোক করি দূরপরাহত ;
আমার কী আছে কাজ, কী আমার ব্রত।
আমার এ প্রতিহত নিষ্ফল জীবনে
কী রহিল, কিসের গৌরব? এই বনে
বসে রব নতশিরে নিঃসঙ্গ একাকী
লক্ষ্যহীনা। যে দিকেই ফিরাইব আঁখি
সহস্র স্মৃতির কাঁটা বিঁধিবে নিষ্ঠুর;
লুকায়ে বক্ষের তলে লজ্জা অতি ক্রূর
বারম্বার করিবে দংশন। ধিক্ ধিক্,
কোথা হতে এলে তুমি, নির্মম পথিক,
বসি মোর জীবনের বনচ্ছায়াতলে
দণ্ড দুই অবসর কাটাবার ছলে
জীবনের সুখগুলি ফুলের মতন
ছিন্ন করে নিয়ে, মালা করেছ গ্রন্থন
একখানি সূত্র দিয়ে। যাবার বেলায়