তোমায় আমায় মিল হয়েছে কোন্ যুগে এইখানে।
ভাষায় ভাষায় গাঁঠ পড়েছে, প্রাণের সঙ্গে প্রাণে।
ডাক পাঠালে আকাশপথে কোন্ সে পুবেন বায়ে
দূর সাগরের উপকূলে নারিকেলের ছায়ে।
গঙ্গাতীরের মন্দিরেতে সেদিন শঙ্খ বাজে,
তোমার বাণী এ পার হতে মিলল তারি মাঝে।
বিষ্ণু আমায় কইল কানে, বললে দশভুজা,
‘ অজানা ওই সিন্ধুতীরে নেব আমার পূজা। '
মন্দাকিনীর কলধারা সেদিন ছলোছলো
পুব সাগরে হাত বাড়িয়ে বললে, ‘ চলো, চলো। '
রামায়ণের কবি আমায় কইল আকাশ হতে,
‘ আমার বাণী পার করে দাও দূর সাগরের স্রোতে। '
তোমার ডাকে উতল হল বেদব্যাসের ভাষা —
বললে, ‘ আমি ওই পারেতে বাঁধব নূতন বাসা। '
আমার দেশের হৃদয় সেদিন কইল আমার কানে,
‘ আমায় বয়ে যাও গো লয়ে সুদূর দেশের পানে। '
সেদিন প্রাতে সুনীল জলে ভাসল আমার তরী —
শুভ্র পালে গর্ব জাগায় শুভ হাওয়ায় ভরি।
তোমার ঘাটে লাগল এসে, জাগল সেথায় সাড়া,
কূলে কূলে কাননলক্ষ্মী দিল আঁচল নাড়া।
প্রথম দেখা আবছায়াতে আঁধার তখন ধরা,
সেদিন সন্ধ্যা সপ্তঋষির আশীর্বাদে ভরা।
প্রাতে মোদের মিলনপথে উষা ছড়ায় সোনা,
সে পথ বেয়ে লাগল দোঁহার প্রাণের আনাগোনা।
দুইজনেতে বাঁধনু বাসা পাথর দিয়ে গেঁথে,
দুইজনেতে বসনু সেথায় একটি আসন পেতে।
বিরহরাত ঘনিয়ে এল কোন্ বরষের থেকে,
কালের রথের ধুলা উড়ে দিল আসন ঢেকে।