পুষ্প। লম্বা দড়ি আছে।
হৈম। আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে।
পুষ্প। তুই হাঁউমাউ করিস নে তো। চতুষ্পদ একটু চরে বেড়াক-না!
হৈম। উনি ছান্দোগ্য নিয়ে যখন বেরলেন তখনি বুঝলুম, ফিরবেন না। মণ্ডূক মানে ব্যাঙ বুঝি, ভাই?
পুষ্প। হাঁ।
হৈম। উনি আজকাল বলতে আরম্ভ করেছেন, মানুষের আত্মা হচ্ছে ব্যাঙ। সেই পরম ব্যাঙ যখন অন্তরে কুড়ুর কুড়ুর করে ডাকে তখনি বোঝা যায়, সে পরমানন্দে আছে।
পুষ্প। তাই হোক-না, ওর আত্মা দেশে বিদেশে ডেকে বেড়াক, তোর আত্মা-ব্যাঙ এখন কিছুদিনের মতো ঘুমিয়ে নিক।
হৈম। মনটা যে হু হু করবে, তার চেয়ে ব্যাঙের ডাক যে ভালো।
পুষ্প। ভয় নেই, আনব তোর মাণ্ডূক্যকে ফিরিয়ে।
ষষ্ঠী। মা, শরণ নিলুম তোমার।
পুষ্প। খবর নিয়েছি পাড়ায়, তোমার নাতি মাখন পলাতক সাত বছর থেকে— সংসারের দুনলা বন্দুক লেগেছে তার বুকে, দুঃখ এখনো ভুলতে পারে নি। একটা বিয়ে করলে পুরুষের পা পড়ে না মাটিতে, তোলা থাকে স্ত্রীর মাথার উপরে; আর, দুটো বিয়ে করলেই দুজোড়া মল বাজতে থাকে ওদের পিঠে, শিরদাঁড়া যায় বেঁকে।
ষষ্ঠী। কী না জান তুমি, মা। নবগ্রাম থেকে আরম্ভ করে মখ্লুগঞ্জ পর্যন্ত সব কটা গাঁ যে তুমি জিতে নিয়েছ। বিধাতাপুরুষ নিষ্ঠুর, তাই তোমায় মোলাম করতে হয় তাঁর শাসন।
পুষ্প। না জ্যাঠামশায়, বাড়িয়ে বোলো না। আমি মজা দেখতে বেরিয়েছি— ছুটি পেয়েছি বই পড়ার গারদ থেকে। দেখতে এলুম কেমন করে নিজের পায়ে বেড়ি আর নিজের গলায় ফাঁস পরাতে নিস্পিস্ করতে থাকে মানুষের হাত দুটো। এ না হলে ভবের খেলা জমত না। ভগবান বোধ হয় রসিক লোক, হাসতে ভালোবাসেন।
ষষ্ঠী। না মা, সবই অদৃষ্ট। হাতে হাতে দেখো-না! বড়ো বউয়ের ছেলেপুলের দেখা নেই। ভাবলেম, পিতৃপুরুষ পিণ্ডি না পেয়ে শুকিয়ে মরবেন বৈতরণীতীরে। ধরে বেঁধে দিলেম মাখনের দ্বিতীয় বিয়ে, আর সবুর সইল না, দেখতে দেখতে পরে পরে দুই পক্ষেরই কল্যাণে চারটি মেয়ে তিনটি ছেলে দেখা দিল আমার ঘরে।
পুষ্প। এবারে পিতৃপুরুষের অজীর্ণ রোগের আশঙ্কা দেখছি।
ষষ্ঠী। মা, তোমার সব ভালো, কেবল একটা বড়ো খট্কা লাগে— মনে হয়, তুমি দেবতা ব্রাহ্মণ মানই না।
পুষ্প। কথাটা সত্যি।
ষষ্ঠী। কেন মা, ঐ খুঁতটুকু কেন থেকে যায়।
পুষ্প। সংসারে দেবতাব্রাহ্মণের অবিচারের বিরুদ্ধেই যে লড়াই করতে হয়, ওদের মানলে জোর পেতুম না। সে কথা পরে হবে, আমি মাখনের খোঁজেই আছি।