সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ,
হে ভৈরব, শক্তি দাও, ভক্তপানে চাহো।
দূর করো মহারুদ্র,
যাহা মুগ্ধ, যাহা ক্ষুদ্র,
মৃত্যুরে করিবে তুচ্ছ প্রাণের উৎসাহ।
দুঃখের মন্থনবেগে উঠিবে অমৃত
শঙ্কা হতে রক্ষা পাবে যারা মৃত্যুভীত।
তব দীপ্ত রৌদ্র তেজে
নির্ঝরিয়া গলিবে যে,
প্রস্তর-শৃঙ্খলোন্মুক্ত ত্যাগের প্রবাহ॥
বিক্রম। এর কী অর্থ? আজ মীনকেতুর পূজার আয়োজন করেছি। ভৈরবের স্তব দিয়ে তোমরা তার ভূমিকা করলে কেন।
দেবদত্ত। রাজার এই পূজা এখনো জনসাধারণে স্বীকার করতেই পারছে না। এমন কি, তারা ভীত হয়েছে।
বিক্রম। কেন, তাদের ভয় কিসের।
দেবদত্ত। তোমার সাহস দেখে তারা স্তম্ভিত। পঞ্চশর দগ্ধ হয়েছেন যাঁর তপোবনে, তাঁরই পূজার বনে কন্দর্পের পূজা? এর পরিণামে বিপদ ঘটবে না কি?
বিক্রম। কন্দর্প সেবার এসেছিলেন অপরাধীর মতো লুকিয়ে — এবার তাঁকে ডাকব প্রকাশ্যে, আসবেন দেবতার যোগ্য নিঃসংকোচে — মাথা তুলে ধ্বজা উড়িয়ে। বিপদের ভয় বিপদ ডেকে আনে।
দেবদত্ত। মহারাজ, আদিকাল থেকেই ঐ দুই দেবতার মধ্যে বিরোধ।
বিক্রম। ক্ষতি তাতে মানুষেরই। এক দেবতা আর-এক দেবতার প্রসাদ থেকে মানুষকে বঞ্চিত করেন। ব্রাহ্মণ, শাস্ত্র মিলিয়ে চিরদিন তোমরা দেবপূজার ব্যাবসা করে এসেছ তাই দেবতার তোমরা কিছুই জান না।
দেবদত্ত। সেকথা ঠিক, দেবতার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পুঁথির থেকে। শ্লোকের ভিড় ঠেলে মরি; দক্ষিণা পাই, কিন্তু ওঁদের কাছে ঘেঁষবার সময় পাই নে।
বিক্রম। আমার মীনকেতু অশাস্ত্রীয়; অনুষ্টুভ-ত্রিষ্টুভের বন্ধন মানেন না। তিনি প্রলয়েরই দেবতা। রুদ্রভৈরবের সঙ্গেই তাঁর অন্তরের মিল — পিনাক ছদ্মবেশ ধরেছে তাঁর পুষ্পধনুতে।