২। শুনে বুঝছি, লোকটি কবি। মনে তো আছে, আমাদের ধরণীদাস। গৌরীতরাইয়ের নথনি বুনত শাল, ধরণী আস্তে আস্তে দাঁড়াত তার আঙিনার কোণে। আর সে দিত তার কুণ্ডল ঝুলিয়ে ঝংকার, তারই চোটে ধরণী সাত খাতা জুড়ে ছড়া লিখেছে। খেতুলাল, তুই ধরেছিস ঠিক, লোকটা কবি।
৪। হোক, বা না হোক, চেহারায় মানাবে। ঐ-যে আসছে।
বিপাশা। (নরেশের প্রতি) কবি নরোত্তম, এদের বঞ্চিত কোরো না। তোমাকে গান গাইতে বলতে সাহস পাই নে। কিন্তু আমি তো তোমারই শিষ্যা, যথাসময়ে আমাকে অনুমতি কোরো, আমি গাইব।
নরেশ। তোমার ভক্তিতে আমি প্রীত। ভালো, অনুমতি করছি, গাও তুমি।
বিপাশা। সে কি প্রভু, এখনই? এখনো তো সময় হয় নি।
নরেশ। এতদিনেও আমার কাছে এ শিক্ষা হল না যে, গানের অসময় নেই?
১। কবি অন্যায় বলেন নি। ঐ দেখো-না, লোক জড়ো হয়েছে। সময় হল।
বিপাশা। গান
তোমার আসনখানি দেখে মন-যে কেমন করে।
ওগো বঁধু, ফুলের সাজি
মঞ্জরীতে ভরল আজি,
ব্যথার হারে গাঁথব তারে রাখব চরণ-’পরে।
পায়ের ধ্বনি গনি গনি রাতের তারা জাগে।
উত্তরীয়ের হাওয়া এসে ফুলের বনে লাগে।
ফাগুনবেলার বুকের মাঝে
পথ-চাওয়া সুর কেঁদে বাজে,
প্রাণের কথা ভাষা হারায় চোখের জলে ঝরে॥
১। হায় হায়, খাঁটি কবি বটে রে। ছেড়ে দেওয়া হবে না। দাদাশ্বশুরের আটচালার এক কোণে জায়গা করে দেব।
২। কবি, রচনা তোমারই বটে তো? ভণিতা নেই কেন। আমাদের বংশীলাল খুব লম্বা করেই ভণিতা লাগায়।
নরেশ। ভণিতার সম্পর্ক রাখি নে। আমি জানি গান যে গায় গান তারই। গানটা আমার কি তোমার, এই অত্যন্ত বাজে প্রশ্ন যদি না ভুলিয়ে দিলে তাহলে সে গান গানই নয়।
৩। কিন্তু দেখো কবি, আমার কেমন মনে হচ্ছে এ গান আমি পূর্বে শুনেছি এই কাশ্মীরেই।
নরেশ। বড়ো খুশি হলুম এ কথা শুনে। তুমি রসিক লোক। ভালো গান শুনলেই মনে হয় এ গান আগেই শুনেছি।
৩। মনে হচ্ছে আমাদের কবি শশাঙ্ক যেন ঐ রকমের একটা—
নরেশ। কিছুই অসম্ভব নয়, কোনো কোনো কবি থাকেন যাঁর রচনা ঠিক অন্য লোকের রচনার মতোই হয়।