ভার্গব। কুঞ্জলাল, এ কী বুদ্ধি তোর। কত বড়ো দুঃখ ওঁকে দিলি দেখ্ তো। কেন এসব সংবাদ এই শান্তিতীর্থে।
কুঞ্জলাল। মা, কেন এমন স্তব্ধ হয়ে আকাশে তাকিয়ে রইলে। চিন্তার কথা কিছুই নেই, মৃত্যুর পথ খোলা আছে, কোনো অপমান সেখানে পৌঁছয় না। দাও স্বহস্তে আজকে পূজার নির্মাল্য, নিয়ে যাই তাদের কাছে, আর দাও তোমার হাতের লিখন একখানি, একটি আশীর্বাদ— তাদের সব দুঃখ শুভ্র হয়ে যাবে।
নরেশ। বিপাশা, আমার কী মনে হচ্ছে বলব?
বিপাশা। বলো তো।
নরেশ। এইখানে এসে আমাদের প্রেম পরিপূর্ণ হয়েছে। আশ্চর্যের কথা শুনবে?
বিপাশা। কী, বলো।
নরেশ। আজ মন তোমার গান শোনবারও অপেক্ষা করে না— সকল ধ্বনি এখানে আলোক হয়ে উঠেছে, প্রত্যক্ষ আমার অন্তরে প্রবেশ করে। তুমি কি তাই অনুভব কর না।
বিপাশা। প্রিয়তম, তোমার আনন্দে আজ আমি আনন্দিত, তার চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারি নে।
নরেশ। আজ আলোকের মধ্যে তোমাকে দেখলুম আলোকরূপে, আর সেই সঙ্গে আমাকেও। আর কোনো ক্ষোভ নেই আমার।
সুমিত্রা। কুমার এসেছেন, শীঘ্র তাঁকে ডেকে আনো, বিপাশা।
কুমারসেন। রাজত্বের পথ অতিক্রম করে এই তীর্থেই শেষে আসতে হল, বোন।
সুমিত্রা। অন্যত্র তোমাকে অনেক প্রয়োজন আছে। শেষ যদি না হয়ে থাকে এখানে এলে কেন।
কুমারসেন। তোমাকে রক্ষা করবার জন্যে।
সুমিত্রা। কার হাত থেকে।
কুমারসেন। বিক্রম মহারাজ জ্বালামুখী দেবীর শপথ নিয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন, যে করে হোক এখান থেকে তোমাকে সরাবেন। তীর্থের পথে সৈন্যবাহিনী আসা অসম্ভব তাই একে একে ক্রমে ক্রমে তাঁর লোক নিয়ে চারি দিক পূর্ণ করে তুলছেন।
সুমিত্রা। আমাকে তিনি চান?
কুমারসেন। হাঁ।
সুমিত্রা। আর কী চান।