চৈত্রের রাতে যে মাধবীমঞ্জরী
ঝরে গেল, তারে কেন লও সাজি ভরি।
সে শুধিছে তার ধুলায় চরম দেনা,
আজ বাদে কাল যাবে না তো তারে চেনা।
মরুপথে যেতে পিপাসার সম্বল
গাগরি হইতে চলকিয়া পড়ে জল,
সে জলে বালুতে ফল কি ফলাতে পারো?
সে জলে কি তাপ মিটিবে কখনো কারো?
যাহা দেওয়া নহে, যাহা শুধু অপচয়,
তারে নিতে গেলে নেওয়া অনর্থ হয়।
ক্ষতির ধনেরে ক্ষয় হতে দেওয়া ভালো,
কুড়াতে কুড়াতে শুকায়ে সে হয় কালো।
হায় গো ভাগ্য, ক্ষণিক করুণাভরে
যে হাসি যে ভাষা ছড়ায়েছ অনাদরে,
বক্ষে তাহারে সঞ্চয় করে রাখি—
ধুলা ছাড়া তার কিছুই রয় না বাকি।
নিমেষে নিমেষে ফুরায় যাহার দিন
চিরকাল কেন বহিব তাহার ঋণ?
যাহা ভুলিবার তাহা নহে তুলিবার,
স্বপ্নের ফুলে কে গাঁথে গলার হার!
প্রতি পলকের নানা দেনাপাওনায়
চলতি মেঘের রঙ বুলাইয়া যায়
জীবনের স্রোতে ; চলতরঙ্গতলে
ছায়ার লেখন আঁকিয়া মুছিয়া চলে
শিল্পের মায়া—নির্মম তার তুলি
আপনার ধন আপনি সে যায় ভুলি।
বিস্মৃতিপটে চিরবিচিত্র ছবি
লিখিয়া চলেছে ছায়া - আলোকের কবি।
হাসিকান্নার নিত্য - ভাসান খেলা
বহিয়া চলেছে বিধাতার অবহেলা।