বিরূপাক্ষ। কী বললে হে বিশু! তুমি বলতে চাও আমি মিছে কথা বলেছি?
বিশ্ববসু। তা বলতে চাই নে, কিন্তু কথাটা তাই বলে মানতে পারব না— এতে রাগই কর আর যাই কর।
বিরূপাক্ষ। তুমি মানবে কেন। তুমি তোমার বাপখুড়োকেই মান না, এত বুদ্ধি তোমার। এ রাজত্বে রাজা যদি গা ঢাকা দিয়ে না বেড়াত তা হলে কি এখানে তোমার ঠাঁই হত। তুমি তো নাস্তিক বললেই হয়।
বিশ্ববসু। ওহে আস্তিক, অন্য রাজার দেশ হলে তোমার জিভ কেটে কুকুরকে দিয়ে খাওয়াত, তুমি বল কিনা আমাদের রাজাকে বিকট দেখতে!
বিরূপাক্ষ। দেখো বিশু, মুখ সামলে কথা কও।
বিশ্ববসু। মুখ যে কার সামলানো দরকার সে আর বলে কাজ নেই।
প্রথম। চুপ চুপ, এ-সব ভালো হচ্ছে না। আমাকে সুদ্ধ বিপদে ফেলবে দেখছি। আমি এ-সব কথার মধ্যে নেই।
প্রথম। ঠাকুরদা, তোমাকে আজ এমন করে সাজালে কে। মালাটি কোন্ নিপুণ হাতের গাঁথা।
ঠাকুরদা। ওরে বোকারা, সব কথাই কি খোলসা করে বলতে হবে নাকি। কিছু ঢাকা থাকবে না?
দ্বিতীয়। দরকার নেই দাদা, তোমার তো সব ফাঁস হয়েই আছে। আমাদের কবিকেশরী তোমার নামে যে গান বেঁধেছে শোন নি বুঝি? সে যে ঘরে ঘরে রটে গেছে।
ঠাকুরদা। একটা ঘরই যথেষ্ট, ঘরে ঘরে শুনে বেড়াবার কি সময় আছে।
তৃতীয়। ওটা তোমার নেহাত ফাঁকা বড়াই। ঠাকরুনদিদি তোমাকে আঁচলে বেঁধে রাখে বটে। পাড়ার যেখানে যাই সেখানেই তুমি, ঘরে থাক কখন।
ঠাকুরদা। ওরে, তোদের ঠাকরুনদিদির আঁচল লম্বা আছে। পাড়ার যেখানে যাই সে আঁচল ছাড়িয়ে যাবার জো নেই। তা, কবি কী বলছেন শুনি।
তৃতীয়। তিনি বলছেন—
সেখানে তোমার মতন ভোলা কে— ঠাকুরদাদা!
যেখানে রসিক-সভা পরম শোভা
সেখানে এমন রসের ঝোলা কে— ঠাকুরদাদা!
ঠাকুরদা। আরে চুপ চুপ! এমন বসন্তের দিনে তোরা এ কী গান ধরলি রে!
প্রথম। কেন ধরলুম জান না?—
তোমারি বেচাকেনা সেই হাটে,
পড়ে না পদধূলি পথ ভুলি