তাহাকে খাওয়াইয়াছিলেন। ইহার পরে এক-পদ মিষ্টান্নের পালা ছিল; কিন্তু শ্রীশ্রীমতী উহা যথানির্দ্দিষ্ট পরিবেষকদের হাতে দিয়া হাসিয়া বলিয়াছিলেন যে, এমন খর্ব্বদেহ রোগীটির পক্ষে যেটুকু খাদ্য উৎকৃষ্ট এবং যথেষ্ট বলিয়া তাঁহার কাছে প্রতীয়মান হইয়াছে, তাহার উপর আরো অধিক যোগ করিবার দায়িত্ব তিনি লইতে ইচ্ছা করেন না। রাজকুমারীর সেদিনকার কার্য্য শেষ না হওয়া পর্য্যন্ত রাণী অপেক্ষা করিয়াছিলেন ও পরে সেই রাজবংশীয়া শুশ্রূষাকারিণী হাঁসপাতালের উর্দ্দি পরিয়াই মাতার সহিত গাড়ীতে করিয়া বাকিংহাম প্রাসাদে ফিরিয়া গিয়াছিলেন।
৯
৩১এ অক্টোবরে সমাপিত সপ্তাহে অল্পকয়েক স্থানে লঘুবৃষ্টিপাত হইয়াছে। সমস্ত প্রদেশে আরও অধিক বৃষ্টির আশু প্রয়োজন। কোনো কোনো জিলায় আমন ধান শুকাইতেছে বলিয়া প্রতিবেদন করা হইয়াছে। উত্তর এবং পশ্চিম বাংলায় শষ্যের ভাবী অবস্থা সাধারণত আশাজনক নহে। অন্যত্র ভাবী অবস্থা মাঝামাঝি রকম। রবিশষ্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা চলিতেছে। বৃষ্টির অভাবে বীজবপনের ব্যাঘাত ঘটিতেছে। এই প্রদেশে মোটা চালের গড়মূল্য পূর্ব্বসপ্তাহের তুলনায় প্রায় শতকরা হারে দুই মাত্রা বাড়িয়াছে।
১০
আমাদের অরণ্যের এবং ফলের বাগানের গাছসকল তাহাদের বৃদ্ধির প্রত্যেক অবস্থায় কীটশত্রুদের আক্রমণের বিষয়; এই কীটশত্রুগণ বাধাপ্রাপ্ত না হইলে শীঘ্রই বৃক্ষসকলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করিত। আমাদের আরণ্যবৃক্ষ এবং ছায়াতরুগুলির বিনাশে আমাদের যে কী হইত, তাহা বর্ণনা করার চেয়ে কল্পনা করা সহজ। কাঠ আমাদের এত প্রকার সামগ্রীতে লাগে যে, ইহাকে বাদ দিয়া সভ্য মানুষের কথা চিন্তা করা কঠিন। এ দিকে আমাদের ফলবাগানের ফলসকলও যার-পর-নাই প্রয়োজনীয়। সৌভাগ্যক্রমে বৃক্ষদের কীটশত্রুসকলেরও নিজেদের নিত্যনিযুক্ত শত্রু যে নাই তাহা নহে; এই শত্রুদের মধ্যে অনেকজাতীয় পক্ষী আছে, যাহাদের অস্ত্রসজ্জা এবং অভ্যাসসকল কীটআক্রমণ-ব্যাপারে তাহাদিগকে বিশেষরূপে যোগ্যতা দান করে, এবং তাহাদের সমস্ত জীবন এই কীটের অনুধাবনে ব্যয়িত হয়।
১১
আলেকজাণ্ডার দি গ্রেট এবং প্রাচীনকালের পূর্ব্বদেশীয় অনেক রাজাও সিংহ পুষিপোষা সিংহ তাঁহাদের প্রাসাদের মধ্যে স্বাধীনভাবে ঘুরিয়া বেড়াইত। বর্ত্তমানকাল পর্য্যন্ত আবিসিনিয়ার রাজগণ ঐ রীতি রক্ষা করিয়া আসিতেছেন এবং আলজিরিয়ার কোনো কোনো অংশে এখনো সিংহদিগকে অন্ধ করিয়া ও পোষ মানাইয়া ভূতছাড়ানোর কাজে লাগানো হইয়া থাকে। মধ্যযুগের শেষ-অংশে মিলানে ও ইটালির অন্যান্য নগরে সিংহ এবং চিতাবাঘকে অপরাধী ব্যক্তির প্রাণসংহারের কার্য্যে ব্যবহার করা হইত।
১২
একজন ফরাসী সৈনিক, এমব্রোজ পেরিশঁ, আপন জীবন-রক্ষার জন্য একটি ঘোড়ার কাছে ঋণী। তাহার দুই পা জর্ম্মান কামানের দ্বারা চূর্ণ হইয়া গিয়াছিল। যখন রাত হইল, তখন সে তার কাছে একটা বড়ো সাদা ঘোড়ার গুরুশ্বাসের শব্দ শুনিতে পাইল, সেই ঘোড়াটি ছোটো ছোটো ঘাস চিবাইয়া খাইতেছিল। জন্তুটির আরোহী ছিল না; সৈনিক তাহাকে শিস দিয়া ডাকিল। ঘোড়াটি আনন্দে মৃদু হ্রেষাধ্বনি করিয়া উঠিল। নিজের জন্য স্বল্পমাত্র চেষ্টা করাও পেরিশঁর পক্ষে অসাধ্য ছিল। ঘোড়াটা যেন তাহা বুঝিতে পারিল, কেন না সে হাঁটু গাড়িয়া তাহার পাশে আসিয়া পড়িল এবং তাহার বক্ষের ঊর্দ্ধে মাথা রাখিয়া স্তব্ধ হইয়া রহিল। তাহার পরে সে উঠিল এবং সৈনিকের চারি দিকে ঘুরিয়া বেড়াইল। অবশেষে থামিল, আহত ব্যক্তিকে আগাগোড়া ঘ্রাণ করিল এবং তাহার পর সেই সৈনিকের চামড়ার কোমরবন্ধ দাঁতে করিয়া ধরিয়া সে তাহাকে মাটি হইতে তুলিল এবং ছুটিয়া চলিয়া গেল।