১৪৫
মন্দিরের সঙ্গে সঙ্গে Solomonএর নির্ম্মাণ-উদ্যোগ শেষ হইল না। জেরুজিলাম দুর্গবদ্ধ হইল; মহাশোভন রাজবাটীসমূহ নির্ম্মিত হইল; যে নগরে মাঝে মাঝে বড়ো বড়ো উৎসব-উপলক্ষ্যে দর্শকগণের ভিড় হয় তাহার জন্য জল-সরবরাহের কারখানা ও জল-নিকাশের পথের যে নিতান্ত প্রয়োজন এ কথা Solomon বিস্মৃত হন নাই। প্রথম বয়সে শাসনকার্য্যে নিবিড়ভাবে মনোনিবেশ করিয়াছিলেন, এবং দেশটিও সুব্যবস্থিত ছিল। তথাপি তাঁহার সমস্ত ঐশ্বর্য্য ও সমস্ত প্রাজ্ঞতা সত্ত্বেও Solomon-এর জীবন অসুখী ছিল। যেসকল প্রলোভন রাজাকে ঘিরিয়া থাকে তিনি অসহায়ভাবে তাহার কবলগ্রস্ত হইয়াছিলেন। তাঁহার অন্তঃপুর অভূতপূর্ব্ব পরিমাণে বৃহৎ ছিল; তাঁহার পত্নীদের মধ্যে অনেকেই প্রতিমাপূজক হওয়ায় তাঁহারা ঈশ্বরের নিকট হইতে তাঁহার হৃদয় অপহরণ করিয়া লইলেন। তাঁহার বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিনি ধর্ম্মকর্ম্মে শিথিল হইতে লাগিলেন-রোজ্যমধ্যে অবাধে প্রতিমাপূজার অনুমোদন করিলেন। তাঁহার রাজত্বের শেষভাগে তাঁহার প্রতি জনাদর হ্রাসপাইয়াছিল।
১৪৬
David যে ধনভাণ্ডার পূর্ণ করিয়াছিলেন যত দিন তাহার কিছুমাত্র অবশিষ্ট থাকিল তত দিন সব ভালোই চলিল, কিন্তু তাহাও যখন নিঃশেষ হইল এবং তাঁহার অতিসজ্জিত প্রাসাদগুলির ও অসংখ্য ভৃত্যবর্গের সংরক্ষণের জন্য অর্থসংগ্রহ করার প্রয়োজন হইল–তখন রাজকর পীড়াদায়ক ও প্রজাগণ অসন্তুষ্ট হইয়া উঠিল। অবশেষে প্রায় ত্রিশ বৎসর রাজত্ব করিয়া পঞ্চাশের কিছু বেশি বয়সে তিনি মারা গেলেন। Solomonঅনেক বিস্ময়কর সুযোগ পাইয়াছিলেন। তিনি বিস্তৃত সাম্রাজ্য, মহাখ্যাতি এবং অগণিত ধনের উত্তরাধিকারী ছিলেন। পরন্তু প্রথমত তিনি ভালোই চলিয়াছিলেন, কিন্তু সমৃদ্ধির আনুষঙ্গিক প্রলোভনসমূহ তাঁহাকে অভিভূত করিল, এবং শেষের বৎসরগুলি তিনি ইন্দ্রিয়সম্ভোগে কাটাইয়াছিলেন। তিনি যখন অকালে জীর্ণ হইয়া মারা যান, তখন তিনি শূন্য রাজকোষ, বিদ্রোহী প্রজা এবং এমন একটি সাম্রাজ্য রাখিয়া গেলেন, যাহা লেশমাত্র স্পর্শে খণ্ড খণ্ড হইয়া পড়িতে প্রস্তুত।
১৪৭
বরাকর পুলিস ষ্টেশনের কয়েক মাইল দক্ষিণে বরাকর নদীর সহিত ইহার মিলনস্থানে, দামোদর নদ প্রথমে বর্দ্ধমান জিলায় প্রবেশ করে। অতঃপর ইহা রাণীগঞ্জ ও অণ্ডাল অতিক্রম করিয়া বর্দ্ধমান ও বাঁকুড়া জিলার মধ্যবর্ত্তী ৪৫ মাইল-ব্যাপী সীমা রচনাপূর্ব্বক দক্ষিণ-পূর্ব্ব দিকে প্রবাহিত হয় এবং খণ্ডঘোষের কাচে বর্দ্ধমান জিলায় প্রবেশ করে। এখানে নদী উত্তর-পূর্ব্ব দিকে হঠাৎ বাঁক লয় এবং বর্দ্ধমান সহরের কাছ ঘেঁষিয়া যাওয়ার পর সোজা দক্ষিণে মোড় ফিরিয়া অবশেষে মোহনপুর গ্রামের নিকটে এই জিলা পরিত্যাগ করে। ইহা অতঃপর শাপুর ও হবিবপুর গ্রামের মধ্যস্থলে উত্তর দিক হইতে হুগলী জিলায় প্রবেশ করে এবং একবার পূর্ব্বে একবার পশ্চিমে বাঁকিতে বাঁকিতে আরামবাগ মহকুমাকে জিলার অবশিষ্টাংশ হইতে পৃথক্ করিয়া দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়।
১৪৮
রাজবলহাটের উপর দিক হইতে ৮ মাইল দূর পর্য্যন্ত ইহা হাওড়া এবং হুগলী জিলার মধ্যবর্ত্তী সীমা রচনা করে। সীমান্তের ৮ মাইল ধরিয়া লইলে হুগলী জিলায় এই নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮ মাইল। তার পর ওক্না গ্রামের ধার দিয়া হাওড়া জিলায় প্রবেশ করে এবং দক্ষিণে আমতার দিকে প্রবাহিত হয়, আরও ভাটিতে অগ্রসর হইয়া ইহা দক্ষিণ তীরে গাইমাটা খাড়ির সহিত মিলিত হয়। আম্তা পশ্চাতে ফেলিয়া ইহা বাগনানের অভিমুখে আঁকাবাঁকা দক্ষিণগামী পথ লয় এবং অতঃপর ইহা দক্ষিণপূর্ব্ব দিকে প্রবাহিত হইয়া ফল্তার ঠোঁটার অপর ধারে হুগলী নদীতে পড়িয়াছে। হাওড়া জিলার মধ্যগত এবং তাহার সীমাসংলগ্ন ইহার দৈর্ঘ্য মোট ৪৫ মাইল।