জনার্দন। এই দেখো-না, আজ এত লোক মিলে আনন্দ করছে, রাজা না থাকলে এরা এমন করে মিলতেই পারত না।
ভবদত্ত। ওহে জনার্দন, আসল কথাটাই যে তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ। একটা নিয়ম আছে সেটা তো দেখছি, উৎসব হচ্ছে সেটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সেখানে তো কোনো গোল বাধছে না— কিন্তু রাজা কোথায়, তাকে দেখলে কোথায় সেইটে বলো।
জনার্দন। আমার কথাটা হচ্ছে এই যে, তোমরা তো এমন রাজ্য জান যেখানে রাজা কেবল চোখেই দেখা যায়, কিন্তু রাজ্যের মধ্যে তার কোনো পরিচয় নেই; সেখানে কেবল ভূতের কীর্তন— কিন্তু এখানে দেখো—
কৌণ্ডিল্য। আবার ঘুরে ফিরে সেই একই কথা। তুমি ভবদত্তর আসল কথাটার উত্তর দাও-না হে— হাঁ কি না, রাজাকে দেখেছ কি দেখ নি।
ভবদত্ত। রেখে দাও ভাই কৌণ্ডিল্য। ওর সঙ্গে মিথ্যে বকাবকি করা। ওর ন্যায়শাস্ত্রটা পর্যন্ত এ-দেশী রকমের হয়ে উঠছে। বিনা-চক্ষে ও যখন দেখতে শুরু করেছে তখন আর ভরসা নেই। বিনা-অন্নে কিছুদিন ওকে আহার করতে দিলে আবার বুদ্ধিটা সাধারণ লোকের মতো পরিষ্কার হয়ে আসতে পারে।
আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে,
তাই হেরি তায় সকল খানে।
আছে সে নয়ন-তারায় আলোক-ধারায়, তাই না হারায়—
ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায়
তাকাই আমি যে দিক -পানে।
আমি তার মুখের কথা
শুনব বলে গেলাম কোথা,
শোনা হল না, শোনা হল না।
আজ ফিরে এসে নিজের দেশে
এই-যে শুনি,
শুনি তাহার বাণী আপন গানে।
কে তোরা খুঁজিস তারে
কাঙাল-বেশে দ্বারে দ্বারে,
দেখা মেলে না, মেলে না।
ও তোরা আয় রে ধেয়ে, দেখ্ রে চেয়ে
আমার বুকে—
ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে॥