ওহে কবি, তত্ত্ব না থাকলে আজকের দিনে তোমার এ জিনিস চলবে না।
সে কথা সত্য মহারাজ। আজকের দিনের আধুনিকেরা উপার্জন করতে চায়, উপলব্ধি করতে চায় না। ওরা বুদ্ধিমান!
তা হলে শ্রোতা কাদের ডাকা যায়। আমার রাজবিদ্যালয়ের নবীন ছাত্রদের ডাকব কি।
না মহারাজ, তারা কাব্য শুনেও তর্ক করে। নতুন-শিং-ওঠা হরিণশিশুর মতো ফুলের গাছকেও গুঁতো মেরে মেরে বেড়ায়।
তবে?
ডাক দেবেন যাদের চুলে পাক ধরেছে।
সে কী কথা কবি।
হাঁ মহারাজ, সেই প্রৌঢ়দেরই যৌবনটি নিরাসক্ত যৌবন। তারা ভোগবতী পার হয়ে আনন্দলোকের ডাঙা দেখেতে পেয়েছে। তারা আর ফল চায় না, ফলতে চায়।
ওহে কবি, তবে তো এতদিন পরে ঠিক আমার কাব্য শোনবার বয়েস হয়েছে। বিজয়বর্মাকেও ডাকা যাক।
ডাকুন।
চীন-সম্রাটের দূতকে?
ডাকুন।
আমার শ্বশুর এসেছেন শুনছি —
তাঁকে ডাকতে পারেন — কিন্তু শ্বশুরের ছেলেগুলির সম্বন্ধে সন্দেহ আছে।
তাই ব,লে শ্বশুরের মেয়ের কথাটা ভুলো না কবি।
আমি ভুললেও তাঁর সম্বন্ধে ভুল হবার আশঙ্কা নেই।
আর শ্রুতিভূষণকে?
না মহারাজ, তাঁর প্রতি তো আমার কিছুমাত্র বিদ্বেষ নেই, কেন দুঃখ দিতে যাব।
কবি, তা হলে প্রস্তুত হও গে।
না মহারাজ, আমি অপ্রস্তুত হয়েই কাজ করতে চাই। বেশি বানাতে গেলেই সত্য ছাই-চাপা পড়ে।
চিত্রপট —
চিত্রপটের প্রয়োজন নেই — আমার দরকার চিত্তপট — সেইখানে শুধু সুরের তুলি বুলিয়ে ছবি জাগাব।
এ নাটকে গান আছে নাকি।
হাঁ মহারাজ, গানের চাবি দিয়েই এর এক-একটি অঙ্কের দরজা খোলা হবে।
গানের বিষয়টা কী।
শীতের বস্ত্রহরণ।
এ তো কোনো পুরাণে পড়া যায় নি।
বিশ্বপুরাণে এই গীতের পালা আছে। ঋতু নাট্যে বৎসরে বৎসরে শীত-বুড়োটার ছদ্মবেশ খসিয়ে তার বসন্ত-রূপ প্রকাশ করা হয়, দেখি পুরাতনটাই নূতন।
এ তো গেল গানের কথা, বাকিটা?