কনফারেন্সের গত অধিবেশনের পর আমরা আমাদের দেশের প্রবীণা মহানারীর মৃত্যুশোক অনুভব করিয়াছি—সেই কাশিমবাজারের রানী স্বর্ণময়ী যাঁহার দেশবিশ্রুত সদ্গুণ, ভারতবর্ষেরই সর্বসন্মত বিশেষ সদ্গুণ, দয়া। তাঁহার সেই দয়ায় প্রাচ্য দেশের মুক্তহস্ত বদান্যতা এবং প্রতীচ্যভাগের অর্থনৈতিক দূরদর্শিতা একত্রে মিশ্রিত হইয়াছিল।
এক্ষণে আমাদের এই সভার প্রথম কর্তব্য, বাংলার নূতন শাসনকর্তাকে স্বাগত সম্ভাষণ। তিনি তাঁহার রাজাসনে পদক্ষেপমাত্রেই আমাদের হৃদয় অধিকার করিয়াছেন। প্রজাপালনর জন্য সার জন্ বুড্বর্ন যে সর্বপ্রকার ত্যাগস্বীকারে উন্মুখ ইতিমধ্যে তিনি তাহার প্রমান দিয়াছেন, গুরুতর সংকটের রাজনীতিকে তিনি প্রজাদের প্রার্থনার অনুকূল করিয়াছেন। তাঁহার মন্ত্রগৃহের আসনে বসিয়া তিনি অঙ্গীকার করিয়াছেন যে, শিল্পশিক্ষাপ্রাপ্ত দেশীয় লোকদিগকে সাহায্য করিবার জন্য তিনি প্রস্তুত এবং তিনি রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংক্ষেপের উপায় উদ্ভাবনের জন্য মন্ত্রসভার বেসরকারি মন্ত্রীগণকে বিশেষরূপে অনুরোধ করিয়াছেন। এইরূপে সার জন বাংলা দেশের ভবিষ্যৎকে আশার আলোকে উজ্জ্বল করিয়া তুলিয়াছেন।
বৎসরটি দুর্দৈবের বৎসর চলিতেছে। ভূমিকম্পের আন্দোলনের মধ্যে গত কনফারেন্সের অধিবেশন সমাপ্ত হইয়াছিল। বঙ্গদেশের গাত্র হইতে দৈবনিগ্রহের ক্ষতচিহ্নগুলি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত না হইতেই পরে পরে দুর্ভিক্ষে এবং মারীর আবির্ভাব হইল। বিধাতার বিধানে অশুভ হইতেও শুভ ফল উৎপন্ন হয় গত দুর্ভিক্ষে তাহার পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। সেই অন্নাভাবের দিন বিপন্ন ভারতের প্রতি জগতের সর্বত্র হইতেই করুণা বর্ষিত হইয়াছে। পৃথিবীর বৃহৎ জাতির সহিত যে আমাদের এক বন্ধন আছে তাহা তাঁহারা এই উপলক্ষে স্বীকার করিয়াছেন এবং আমরাও তাহা হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিতে পারিয়াছি।
কিন্তু প্লেগে যেন কতকটা তাহার বিপরীত ফল ফলিয়াছে; ইহাতে দুই জাতির হৃদয়বন্ধনে যেন কঠোর আঘাত করিয়াছে। রাজা-প্রজার পরস্পর বুঝাপড়ার অভাব হওয়াই তাহার মূল এবং শাসিত ও শাসনকর্তার মধ্যে অবাধ বার্তাবহনের অসম্পূর্ণতাই