
উভয় পক্ষের মধ্যে কেবল একটা গু্রুতর প্রভেদ আছে। ভূতপূর্ব ছাএ দেশের হিতোদ্দেশে 'হাড্ওয়ার্কে' যদি-বা অপটু হন অন্তত তাঁহার ' এম্প্টি এলোকোয়েন্স্'ও আছে, কিন্তু আমাদের আল্ট্রা-কন্সার্ভেটিভটি যে সম্প্রদায়ের মুখোজ্জ্বল করেন তাঁহারা বাগ্মিতার জন্যও বিখ্যাত নহেন, 'কঠিন কর্ম’ও তাঁহাদের কর্ম নহে। তাঁহারা শিক্ষাকেও অবহেলা করেন এবং সামর্থ্য হইতেও বঞ্চিত। তাঁহাদের ধন আছে; দেশের হিতোদ্দেশে সে ধন যদি ব্যয় করিতে পারিতেন তবে বাক্যবীর ও কর্মবীর সকলের উপরে উঠিতে পারিতেন; কারণ,কবি বলিয়াছেন
শতেষু জায়তে বক্তা সহস্রেষু চ পণ্ডিতঃ।
শূরো দশসহস্রেষু দাতা ভবতি বা ন বা॥
কিন্তু সম্প্রতি দানে যিনি আমাদের দেশে আদর্শ বলিয়া বিখ্যাত হইয়াছেন তিনি অধ্যাপক ছিলেন, দেশে তাঁহার কোনো 'স্টেক' ছিল না,এবং তাঁহারই উদার বদান্যতায় 'প্রেজেন্ট্ সিস্টেম অফ প্র্যাক্টিক্যালি ফ্রী এডুকেশন' এই দীনহীন দেশে বদ্ধমূল হইতে পারিয়াছে।
ওগূস্ৎ ব্রেয়াল কন্টেম্পোরারি রিভিয়ু পত্রে আক্ষেপ করিয়াছেন যে, ফরাসি ইংরাজকে জানে না, ইংরাজ ফরাসিকে বোঝে না।
ফরাসিকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় ইংরাজের প্রতি তোমার এত বিদ্বেষ কেন— উত্তর পাওয়া যাইবে, ইংরাজ মানুষটাকে আমার খারাপ লাগে না, কিন্তু ইংরাজ জাতটার উপর আমার ঘৃণা।
য়ুরোপের বিদ্যালয়ে যে ইতিহাস শিক্ষা দেত্তয়া হয় তাহাতে অন্য দেশের প্রতি বিরোধ প্রকাশ করিয়া নিজেদের দেশের গৌরব ঘোষণা করা হয়। প্যাট্রিয়টিক ভাবের প্রতি লক্ষ করিয়া ছেলেদিগকে অন্য দেশের সহিত স্বদেশের সাবেক কালের ঝগড়ার কথা স্মরণ করাইয়া, ভবিষ্যৎ পর্যন্ত সেই বিরোধ টানিয়া রাখা হয়। কর্সিকাদেশের মাতৃগণ, অন্য পরিবারের সহিত স্বপরিবারের কুলক্রমাগত যে বিদ্বেষ চলিয়া আসিতেছে এবং তাহাদের প্রতি যে প্রতিহিংসা করিবার আছে, শিশুকাল হইতে সন্তানের কানে তাহা জপ করিতে থাকে। য়ুরোপীয় বিদ্যালয়ে ইতিহাস-পড়ানোও ঠিক সেইরূপ।
আজকাল ইংলন্ডে খুব-একটা লড়াইয়ের নেশা চাপিয়াছে। সৈনিক-দলে ভিড়িরার জন্য ডাক পড়িয়াছে। এই ডাক অন্য-সকল বাণীকে আচ্ছন্ন করিয়া ধ্বনিত হইতেছে। ফ্রান্স্ও যে এ বিষয়ে নিরপরাধ, তাহা নহে। এখন দুই পক্ষের পালোয়ান সাহিত্যে পরস্পরকে শাসাইতেছে। ব্রিটিশ চ্যানেলের দুই পারে এক দল খবরের কাগজ সৈনিকতার রাস্তা দিয়া বর্বরতায় পৌঁছিবার জন্য ঝুঁকিয়া দাঁড়াইয়াছে। লেখক আক্ষেপ করিয়া বলিতেছেন, ব্যক্তিগত ধর্মনীতি হইতে ন্যাশনাল ধর্মনীতির আদর্শের যে পার্থক্য ঘটিয়াছে, শেষে তাহার কি এইরূপ সমন্বয় হইবে। য়ুরোপ কি ইচ্ছা করিয়া বিধিমতে বর্বরতায় ফিরিয়া যাইবে।
আজকাল দুই পয়সা দিলেই খবরের কাগজে পড়িতে পাওয়া যায় যে, ধাতুগত বিরোধের ভাব, অনিবার্য পার্থক্য এবং জাতিগত বিদ্বেষে পরস্পরের বংশানুক্রমিক শত্রুজাতির সহিত, আজ হউক বা কাল হউক, একটা সংঘর্ষ হইবেই। তাহাদের মতে মানুষের প্রবলতম প্রবৃত্তি এবং ন্যায়ধর্মের উচ্চতম নীতিসকল দুই জাতিকে দুই বিপরীত দিকে ঠেলিয়া লইয়া গেছে। তাহারা বলে, নেশনদের মধ্যে শান্তিস্থাপনের আশা বাতুলের খেয়াল মাত্র। ইত্যাদি।