
যাহাই হউক, ইংরাজের মার খাইয়া মার ফিরাইয়া দেওয়া আমাদের পক্ষে কী কী কারণে সহজ নহে, ‘রাজকুটুম্ব’ প্রবন্ধে তাহারই আলোচনার চেষ্টা করিয়াছিলাম। ফিরাইয়া দেওয়া উচিত কি না সে কথা তুলি নাই। কর্তব্য দুঃসাধ্য হইলেও কর্তব্য, বরঞ্চ সে কর্তব্যের গৌরব বেশি। এলাহাবাদের কোনো দেশীয় ধনী ব্যাঙ্কর স্বত্বরক্ষা উপলক্ষে তাঁহার কোনো ইংরাজ ভাড়াটিয়াকে ফুলগাছের টব লইতে ভৃত্যদের দ্বারা বাধা দেন— সেই স্পর্ধায় তাঁহার কারাদন্ড হয়। স্বত্বরক্ষা বা আত্মরক্ষা বা মানরক্ষার খাতিরে কোনো ইংরাজের গায়ে হাত তুলিলে তাহার পরিণাম সুখজনক না হইতে পারে এ আশঙ্কা স্বীকার করিয়াও যখন আমাদের দেশের লোক আঘাতের পরিবর্তে আঘাত করিতে শিখিবে, তখনই ইংরাজের কাপুরুষতার সংশোধন হইবে— এই অত্যন্ত সহজ কথাটি যদি অস্বীকার করি, তবে স্বভাবের নিয়ম সম্বন্ধে আমার সুগভীর অজ্ঞতা প্রকাশ পাইবে।
স্বভাবের নিয়মের অপেক্ষা উচ্চতর নীতি আছে। কিন্তু সে নীতি যতক্ষণ পর্যন্ত না সমস্ত বাধা পরাভূত করিয়া নিজেকে দুর্নিবারভাবে প্রত্যক্ষ করিয়া তোলে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বভাবের নিয়মকেই আশ্রয় করিতে হয়।
কিন্তু এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে যে, এই-যে ঘুষাঘুষির উত্তেজনা আমাদের মনে জাগ্রত হইয়া উঠিতেছে, ইহা আমাদের ধর্মনীতিতে আঘাত না করিয়া থাকিতে পারে না। অশুভপ্রবৃত্তি প্রয়োজনটুকু সিদ্ধ করিয়াই অন্তর্ধান করে না। তাহাকে দাসত্বের ছুতায় আহ্বান করিলেও শেষে সে রাজত্ব করিতে চায়। কোনো কোনো দুর্বৃত্ত মদ না খাইলে যেমন কাজ করিতে পারে না বিদ্বেষ সেইরূপ অন্ধ না হইলে পুরাদমে কাজ করিতে পারে না। গুণ্ডাগিরিকে যদি একবার রীতিমত জাগাইয়া তুলি তবে সে অন্ধবিদ্বেষের নেশায় না মাতিয়া থাকিতে পারিবে না। তখন সে উঠিয়া-পড়িয়া কাজ আরম্ভ করিবে বটে, কিন্তু আমাদের উচ্চতন মনুষ্যত্বের বুকের রক্ত হইতে সে প্রতিদিন তাহার খোরাক আদায় করিতে থাকিবে। গুণ্ডাগিরি বল পাইয়া উঠিয়া মনুষ্যত্বকে শোষণ করে— বাহাদুরির নেশা জাগিয়া ওঠে।
এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে, শুদ্ধ উপদেশে কোনো ফল হয় না— অভ্যাস তাহা অপেক্ষা দরকারি জিনিস। মারা উচিত বলিলেই মারা যায় না, মারা অভ্যাস করা চাই। যাহাদের ঘুষি প্রস্তুত হইয়া আছে, তাহারা শিশুকালে প্রতিবেশীর ছেলেকে মারে, বিদ্যালয়ে সহপাঠৗকে মারে, কলেজে gownsman হইয়া townsman কে মারে— এমনি করিয়া একেবারে এমন পাকিয়া যায় যে, তাহাদের ধর্মগ্রন্থের উপদেশ অরণ্যরোদনে পরিণত হয়। তাই হার্বার্ট্ স্পেন্সার, তাঁহার Facts and Comments গ্রন্থের ত্রিংশত্তম পৃষ্ঠায় লিখিতেছেন—
But the refusal to recognize the futility of mere instruction as a means to moralization, is most strikingly shown by ignoring the conspicuous fact that after two thousand years of Christian exhortations, uttered by a hundred thousand priests throughout Europe, pagan ideas and sentiments remain rampant, from emperors down to tramps. Principles admitted in theory are scorned in practice. Forgiveness is voted dishonourable. An insult must be wiped out by blood the obligation being so peremptory that an officer is expelled from the army for even daring to question it. And in international affairs the sacred duty of revenge, supreme with the savage, is supreme also with the so-called civilized.
ইহা না হইয়া যায় না। চালের একঢি খড় পোড়াইতে গেলেও সমস্ত চালে আগুন লাগে। কাড়াকাড়ি ঘুষাঘুষিকে সমাজের সর্বত্র প্রচলিত করিলে, তবেই আবশ্যকের সময় তাহা অনায়াসপ্রাপ্য হয়।
ট্রুথ প্রভৃতি বিলাতি কাগজে পুলিস আদালতের বিবরণে নিজের স্ত্রীকে, পুত্র-কন্যাকে, আত্মীয়-প্রতিবেশীকে যেরূপ নির্মম পাশবভাবে আঘাত করার উদাহরণ দেখিতে পাই, আমাদের হিন্দুসমাজে তাহার সিকির সিকিও দেখা যায় না। শিকারি বিড়ালের