Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
বন-ফুল - ১৮
বন-ফুল
মারিতাম— জল উঠিত জাগি।
যবে জলধর শিখরের ‘পর
উড়িয়া উড়িয়া বেড়াত দলে,
শিখরেতে উঠি বেড়াতাম ছুটি—
কাপড়-চোপড় ভিজিত জলে!
কিছুই— কিছুই— জানিতাম না রে,
কিছুই হায় রে বুঝিতাম না।
জানিতাম হা রে জগৎমাঝারে
আমরাই বুঝি আছি কজনা!
পিতার পৃথিবী পিতার সংসার
একটি কুটীর পৃথিবীতলে
জানি না কিছুই ইহা ছাড়া আর—
পিতার নিয়মে পৃথিবী চলে!
আমাদেরি তরে উঠে রে তপন,
আমাদেরি তরে চাঁদিমা উঠে,
আমাদেরি তরে বহে গো পবন,
আমাদেরি তরে কুসুম ফুটে!
চাই না জ্ঞেয়ান, চাই না জানিতে
সংসার, মানুষ কাহারে বলে।
বনের কুসুম ফুটিতাম বনে,
শুকায়ে যেতেম বনের কোলে।
জানিব আমারি পৃথিবী ধরা,
খেলিব হরিণশাবক-সনে—
পুলকে হরষে হৃদয় ভরা,
বিষাদভাবনা নাহিক মনে।
তটিনী হইতে তুলিব জল,
ঢালি ঢালি দিব গাছের তলে।
পাখিরে বলিব ‘কমলা বল্’,
শরীরের ছায়া দেখিব জলে!
জেনেছি মানুষ কাহারে বলে।
জেনেছি হৃদয় কাহারে বলে!
জেনেছি রে হায় ভালবাসিলে
যবে জলধর শিখরের ‘পর
উড়িয়া উড়িয়া বেড়াত দলে,
শিখরেতে উঠি বেড়াতাম ছুটি—
কাপড়-চোপড় ভিজিত জলে!
কিছুই— কিছুই— জানিতাম না রে,
কিছুই হায় রে বুঝিতাম না।
জানিতাম হা রে জগৎমাঝারে
আমরাই বুঝি আছি কজনা!
পিতার পৃথিবী পিতার সংসার
একটি কুটীর পৃথিবীতলে
জানি না কিছুই ইহা ছাড়া আর—
পিতার নিয়মে পৃথিবী চলে!
আমাদেরি তরে উঠে রে তপন,
আমাদেরি তরে চাঁদিমা উঠে,
আমাদেরি তরে বহে গো পবন,
আমাদেরি তরে কুসুম ফুটে!
চাই না জ্ঞেয়ান, চাই না জানিতে
সংসার, মানুষ কাহারে বলে।
বনের কুসুম ফুটিতাম বনে,
শুকায়ে যেতেম বনের কোলে।
জানিব আমারি পৃথিবী ধরা,
খেলিব হরিণশাবক-সনে—
পুলকে হরষে হৃদয় ভরা,
বিষাদভাবনা নাহিক মনে।
তটিনী হইতে তুলিব জল,
ঢালি ঢালি দিব গাছের তলে।
পাখিরে বলিব ‘কমলা বল্’,
শরীরের ছায়া দেখিব জলে!
জেনেছি মানুষ কাহারে বলে।
জেনেছি হৃদয় কাহারে বলে!
জেনেছি রে হায় ভালবাসিলে