Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
মনের বাগান-বাড়ি - ২
বিবিধ প্রসঙ্গ
তাহার জন্য ছাড়িয়া দিয়াছি, সে তাহার বাগানটি আমার জন্য রাখিয়াছে। এ বাগানের কাছে কদর্য কিছুই নাই, দুর্গন্ধ কিছুই নাই। পরস্পরের উচিত, যাহাতে নিজের নিজের বাগান পরস্পরের নিকট রমণীয় হয় তাহার জন্য চেষ্টা করা। যত ফুলগাছ রোপণ করা যায়, যত কাঁটা-গাছ উপড়াইয়া ফেলা হয়, ততই ভাল। এত বাণিজ্য ব্যবসায় বাড়িতেছে, এত কলকারখানা স্থাপিত হইতেছে, যে,গাছপালা-ফুলে-ভরা হাওয়া খাইবার জমি কমিয়া আসিতেছে। এই নিমিত্ত তোমার মনের এক অংশে গাছপালা রোপণ করিয়া রাখিয়া দেওয়া উচিত, যাহাতে তোমার প্রিয়তম তোমার মনের মধ্যে আসিয়া মাঝে মাঝে হাওয়া খাইয়া যাইতে পারেন। সে স্থানে অস্বাস্থ্যজনক দূষিত কিছু না থাকে যেন, যদি থাকে তাহা আবৃত করিয়া রাখিও।
সত্যকার আদর্শ লোক সংসারে পাওয়া দুঃসাধ্য। ভালবাসার একটি মহান্ গুণ এই যে, সে প্রত্যেককে নিদেন এক জনের নিকটেও আদর্শ করিয়া তুলে। এইরূপে সংসারে আদর্শ ভাবের চর্চা হইতে থাকে। ভালবাসার খাতিরে লোককে মনের মধ্যে ফুলের গাছ রোপণ করিতে হয়, ইহাতে তাহার নিজের মনের স্বাস্থ্য-সম্পাদন হয়, আর তাহার মনোবিহারী বন্ধুর স্বাস্থ্যের পক্ষেও ইহা অত্যন্ত উপযোগী। নিজের মনের সর্বাপেক্ষা ভালো জমিটুকু অন্যকে দেওয়ায়, ভালোবাসা ছাড়া অমন আর কে করিতে পারে? তাই বলিতেছি ভালোবাসা অর্থে আত্মসমর্পণ করা নহে, ভালোবাসা অর্থে ভাল বাসা, অর্থাৎ অন্যকে ভালো বাসস্থান দেওয়া, অন্যকে মনের সর্ব্বাপেক্ষা ভালো জায়গায় স্থাপন করা। যাঁহাদের হৃদয়কাননের ফুল শুকাইয়াছে, ফুলগাছ মরিয়া গিয়াছে, চারি দিকে কাঁটাগাছ জন্মিয়াছে, এমন সকল অনুর্বরহৃদয় বিজ্ঞ বৃদ্ধেরাই ভালোবাসার নিন্দা করেন।