কাঞ্চী। হে সাধু, লোকহিতের জন্যে তোমার এই আশ্চর্য ত্যাগস্বীকার আমাদের সকলেরই পক্ষে একটা দৃষ্টান্ত। ভাবছি যে, এই হিতকার্যটা নিজেই করব। (সহসা ঠাকুরদাকে দেখিয়া) কে হে, কে তুমি। কোথায় লুকিয়ে ছিলে।
ঠাকুরদা। লুকিয়ে থাকি নি। অত্যন্ত ক্ষুদ্র বলে আপনাদের চোখে পড়ি নি।
রাজবেশী। ইনি এ দেশের রাজাকে নিজের বন্ধু বলে পরিচয় দেন,নির্বোধেরা বিশ্বাস করে।
ঠাকুরদা। বুদ্ধিমানদের কিছুতেই সন্দেহ ঘোচে না, তাই নির্বোধ নিয়েই আমাদের কারবার।
কাঞ্চী। তুমি আমাদের সব কথা শুনেছ?
ঠাকুরদা। আপনারা আগুন লাগাবার পরামর্শ করছিলেন।
কাঞ্চী। তুমি আমাদের বন্দী, চলো শিবিরে।
ঠাকুরদা। আজ তবে বুঝি এমনি করেই তলব পড়ল?
কাঞ্চী। বিড়্ বিড়্ করে বকছ কী?
ঠাকুরদা। আমি বলছি, দেশের টান কাটিয়ে কিছুতেই নড়তে পারছিলেম না, তাই বুঝি ভিতর-মহলে টেনে নিয়ে যাবার জন্যে মনিবের পেয়াদা এল।
কাঞ্চী। লোকটা পাগল নাকি।
রাজবেশী। ওর কথা ভারি এলোমেলো— বোঝাই যায় না।
কাঞ্চী। কথা যত কম বোঝা যায় অবুঝরা ততই ভক্তি করে। কিন্তু আমাদের কাছে সে ফন্দি খাটবে না। আমরা স্পষ্ট কথার কারবারি।
ঠাকুরদা। যে আজ্ঞে মহারাজ, চুপ করলুম।
রোহিণী। ব্যাপারখানা কী। কিছু তো বুঝতে পারছি নে। (মালীদের প্রতি) তোরা সব তাড়াতাড়ি কোথায় চলেছিস।
প্রথম মালী। আমরা বাইরে যাচ্ছি।
রোহিণী। বাইরে কোথায় যাচ্ছিস।
দ্বিতীয় মালী। তা জানি নে, আমাদের রাজা ডেকেছে।
রোহিণী। রাজা তো বাগানেই আছে। কোন্ রাজা।
প্রথম মালী। বলতে পারি নে।
দ্বিতীয় মালী। চিরদিন যে রাজার কাজ করছি সেই রাজা।
রোহিণী। তোরা সবাই চলে যাবি!
প্রথম মালী। হাঁ, সবাই যাব, এখনই যেতে হবে। নইলে বিপদে পড়ব।
রোহিণী। এরা কী বলে বুঝতে পারি নে— ভয় করছে। যে নদীর পাড়ি ভেঙে পড়বে সেই পাড়ি ছেড়ে যেমন জন্তুরা পালায়