আমি রূপে তোমায় ভোলাব না,
ভালোবাসায় ভোলাব।
আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো,
গান দিয়ে দ্বার খোলাব।
ভরাব না ভূষণভারে,
সাজাব না ফুলের হারে,
সোহাগ আমার মালা করে
গলায় তোমার পরাব।
জানবে না কেউ কোন্ তুফানে
তরঙ্গদল নাচবে প্রাণে।
চাঁদের মতো অলখ টানে
জোয়ারে ঢেউ তোলাব॥
সুদর্শনা। হবে না, হবে না; শুধু তোমার ভালোবাসায় কী হবে। আমার ভালোবাসা যে মুখ ফিরিয়েছে। রূপের নেশা আমাকে লেগেছে— সে নেশা আমাকে ছাড়বে না, সে যেন আমার দুই চক্ষে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, আমার স্বপন সুদ্ধ ঝল্মল্ করছে। এই আমি তোমাকে সব কথা বললুম, এখন আমাকে শাস্তি দাও।
রাজা। শাস্তি শুরু হয়েছে।
সুদর্শনা। কিন্তু তুমি যদি আমাকে ত্যাগ না কর আমি তোমাকে ত্যাগ করব।
রাজা। যতদূর সাধ্য চেষ্টা করে দেখো।
সুদর্শনা। কিছু চেষ্টা করতে হবে না— তোমাকে আমি সইতে পারছি নে। ভিতরে ভিতরে তোমার উপর রাগ হচ্ছে। কেন তুমি আমাকে— জানি নে, আমাকে তুমি কী করেছ! কিন্তু কেন তুমি এমনতরো। কেন আমাকে লোকে বলেছিল, তুমি সুন্দর। তুমি যে কালো, কালো— তোমাকে আমার কখনো ভালো লাগবে না। আমি যা ভালোবাসি তা আমি দেখেছি— তা ননির মতো কোমল, শিরীষ ফুলের মতো সুকুমার, তা প্রজাপতির মতো সুন্দর।
রাজা। তা মরীচিকার মতো মিথ্যা এবং বুদ্বুদের মতো শূন্য।
সুদর্শনা। তা হোক, কিন্তু আমি পারছি নে, তোমার কাছে দাঁড়াতে পারছি নে। আমাকে এখান থেকে যেতেই হবে। তোমার সঙ্গে মিলন সে আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। সে মিলন মিথ্যা হবে, আমার মন অন্য দিকে যাবে।
রাজা। একটুও চেষ্টা করবে না?
সুদর্শনা। কাল থেকে চেষ্টা করছি— কিন্তু যতই চেষ্টা করছি ততই মন আরো বিদ্রোহী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমি অশুচি, আমি অসতী, তোমার কাছে থাকলে এই ঘৃণা কেবলই আমাকে আঘাত করবে। তাই আমার ইচ্ছে করছে— দূরে চলে যাই, এত দূরে যাই যেখানে তোমাকে আমার আর মনে আনতে হবে না।
রাজা। আচ্ছা, তুমি যতদূরে পার ততদূরেই চলে যাও।