সুদর্শনা। তবে তো আসছে! তবে তো এল!
সুরঙ্গমা। কে আসছে।
সুদর্শনা। আবার কে! তোর রাজা। থাকতে পারবে কেন। এতদিন চুপ করে আছে এই আশ্চর্য।
সুরঙ্গমা। না, এ আমার রাজা নয়।
সুদর্শনা। না বৈকি! তুমি তো সব জান! ভারি কঠিন তোমার রাজা! কিছুতেই টলেন না! দেখি কেমন না টলেন। আমি জানতুম সে ছুটে আসবে। কিন্তু মনে রাখিস সুরঙ্গমা, আমি তাকে একদিনের জন্যেও ডাকি নি। আমার কাছে তোমার রাজা কেমন করে হার মানে এবার দেখে নিয়ো। সুরঙ্গমা, যা একবার বেরিয়ে গিয়ে দেখে আয় গে। (সুরঙ্গমার প্রস্থান) রাজা এসে আমাকে ডাকলেই বুঝি যাব? কখনো না। আমি যাব না, যাব না।
সুরঙ্গমা। মা, এ আমার রাজা নয়।
সুদর্শনা। নয়? তুই সত্যি বলছিস? এখনো আমাকে নিতে এল না?
সুরঙ্গমা। না, আমার রাজা এমন করে ধুলো উড়িয়ে আসে না। সে কখন আসে কেউ টেরই পায় না।
সুদর্শনা। এ বুঝি তবে—
সুরঙ্গমা। কাঞ্চীরাজের সঙ্গে সে’ই আসছে।
সুদর্শনা। তার নাম কী জানিস।
সুরঙ্গমা। তার নাম সুবর্ণ।
সুদর্শনা। তবে তো সে আসছে। ভেবেছিলুম, আবর্জনার মতো বুঝি বাইরে এসে পড়েছি, কেউ নেবে না— কিন্তু আমার বীর তো আমাকে উদ্ধার করতে আসছে। সুবর্ণকে তুই জানতিস?
সুরঙ্গমা। যখন বাপের বাড়ি ছিলুম তখন সে জুয়োখেলার দলে—
সুদর্শনা। না না, তোর মুখে আমি তার কোনো কথা শুনতে চাই নে। সে আমার বীর, সে আমার পরিত্রাণকর্তা। তার পরিচয় আমি নিজেই পাব। কিন্তু সুরঙ্গমা, তোর রাজা কেমন বল্ তো। এত হীনতা থেকেও আমাকে উদ্ধার করতে এল না? আমার আর দোষ দিতে পারবি নে। আমি এখানে দিনরাত্রি দাসীগিরি করে তার জন্যে চিরজীবন অপেক্ষা করে থাকতে পারব না। তোর মতো দীনতা করা আমার দ্বারা হবে না। আচ্ছা, সত্যি বল্, তুই তোর রাজাকে খুব ভালোবাসিস?
কেমন করে আনব মুখে তোমায় ভালোবাসি!
গুণ যদি মোর থাকত তবে
অনেক আদর মিলত ভবে,
বিনামূল্যের কেনা আমি শ্রীচরণপ্রয়াসী॥