কোশল। শুভলগ্নে কালই স্বয়ংবরের দিন স্থির হোক।
কাঞ্চী। সেই ভালো।
বিদর্ভ। আমরা আয়োজনে প্রবৃত্ত হই গে।
কাঞ্চী। কলিঙ্গরাজ, বন্দী এখন আপনার আশ্রয়েই রইলেন।
কাঞ্চী। ওহে ভণ্ডরাজ!
সুবর্ণ। কী আদেশ।
কাঞ্চী। এখন মহারথীরা সরবেন। এবার শিখণ্ডীকে সামনে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
সুবর্ণ। মহারাজের কথাটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি নে।
কাঞ্চী। সেখানে তোমাকে আমার ছত্রধর হয়ে বসতে হবে।
সুবর্ণ। কিংকর প্রস্তুত আছে, কিন্তু তাতে মহারাজের উপকারটা কী হবে।
কাঞ্চী। ওহে সুবর্ণ, দেখতে পাচ্ছি তোমার বুদ্ধিটা কম বলেই অহংকারটাও কম। রানী সুদর্শনা তোমাকে কী চক্ষে দেখেছেন সেটা এখনো তোমার ধারণার মধ্যে প্রবেশ করে নি দেখছি। যাই হোক, তিনি তো রাজসভায় ছত্রধরের গলায় মালা দিতে পারবেন না, অথচ অধিক দূরে যেতেও মন সরবে না; অতএব যেমন করেই হোক, এ মালা আমারই রাজছত্রের ছায়ায় এসে পড়বে।
সুবর্ণ। মহারাজ, আমার সম্বন্ধে এই-যে সব অমূলক কল্পনা করছেন, এ অতি ভয়ানক কল্পনা। দোহাই আপনার, আমাকে এই মিথ্যা বিপত্তিজালের মধ্যে জড়াবেন না— আমাকে মুক্তি দিন।
কাঞ্চী। কাজটি শেষ হয়ে গেলেই তোমাকে মুক্তি দিতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করব না। উদ্দেশ্যসিদ্ধি হয়ে গেলেই উপায়টাকে কেউ আর চিরস্মরণীয় করে রাখে না।
সুদর্শনা। তা হলে স্বয়ংবরসভায় আমাকে যেতেই হবে? নইলে পিতার প্রাণরক্ষা হবে না?
সুরঙ্গমা। কাঞ্চীরাজ তো এইরকম বলেছেন।
সুদর্শনা। এই কি রাজার উচিত কথা। তিনি কি নিজের মুখে বলেছেন?
সুরঙ্গমা। না,তাঁর দূত সুবর্ণ এসে জানিয়ে গেছে।
সুদর্শনা। ধিক্,ধিক্ আমাকে।
সুরঙ্গমা। সেইসঙ্গে কতকগুলি শুকনো ফুল দিয়ে আমাকে বললে, তোমার রানীকে বোলো, বসন্ত-উৎসবের এই স্মৃতিচিহ্ন বাইরে যত মলিন হয়ে আসছে অন্তরে ততই নবীন হয়ে বিকশিত হচ্ছে।
সুদর্শনা। চুপ কর্, চুপ কর্, আমাকে আর দগ্ধ করিস নে।