রাজপুত্র। এক ডাঙা থেকে দিলেম পাড়ি, তরী ডুবল মাঝ সমুদ্রে, ভেসে উঠলেম আর-এক ডাঙায়। এতদিন পরে মনে হচ্ছে, জীবনে নতুন পর্ব শুরু হল।
সদাগর। রাজপুত্র, তুমি তো কেবলই নতুন নতুন করে অস্থির হলে। আমি ভয় করি ঐ নতুনকেই। যাই বল, বন্ধু, পুরোনোটা আরামের।
রাজপুত্র। ব্যাঙের আরাম এঁদো কুয়োর মধ্যে। এটা বুঝলে না, উঠে এসেছি মরণের তলা থেকে। যম আমাদের ললাটে নতুন জীবনের তিলক পরিয়ে দিলেন।
সদাগর। রাজতিলক তোমার ললাটে তো নিয়েই এসেছ জন্মমুহূর্তে।
রাজপুত্র। সে তো অদৃষ্টের ভিক্ষেদানের ছাপ। যমরাজ মহাসমুদ্রের জলে সেটা কপাল থেকে মুছে দিয়ে হুকুম করেছেন, নতুন রাজ্য নতুন শক্তিতে জয় করে নিতে হবে, নতুন দেশে।–
গান
এলেম নতুন দেশ
তলায় গেল ভগ্ন তরী, কূলে এলেম ভেসে।
অচিন মনের ভাষা
শোনাবে অপূর্ব কোন্ আশা,
বোনাবে রঙিন সুতোয় দুঃখসুখের জাল,
বাজবে প্রাণে নতুন গানের তাল,
নতুন বেদনায় ফিরব কেঁদে হেসে।
নাম-না-জানা প্রিয়া
নাম-না-জানা ফুলের মালা নিয়া
হিয়ায় দেবে হিয়া।
যৌবনেরি নবোচ্ছ্বাসে
ফাগুনমাসে
বাজবে নূপুর ঘাসে ঘাসে,
মাতবে দখিনবায়
মঞ্জরিত লবঙ্গলতায়
চঞ্চলিত এলোকেশে॥
সদাগর। রাজপুত্র, তোমার গানের সুরে কথাটা শোনাচ্ছে ভালো। কিন্তু, জিজ্ঞাসা করি, এ দেশে যৌবনের নবীন রূপ দেখলে কোথায়। চারি দিকটা তো একবার ঘুরে এসেছি। দেখে মনে হল, যেন ছুতোরের তৈরি কাঠের কুঞ্জবন। দেখলুম, ওরা চৌকো চৌকো কেঠো চালে চলেছে, বুকে পিঠে চ্যাপটা, পা ফেলছে খিট্খুট্ খিট্খুট্ শব্দে, বোধ করি চৌকুনি নূপুর পরেছে পায়ে, তৈরি