সন্ন্যাসী। যাও বাবা, তোমরা সমস্ত বনে বনে নদীর ধারে ধারে গেয়ে এসো গে।
ঠাকুরদাদা। প্রভু, আমি যে একেবারে ডুবে গিয়েছি। ডুবে গিয়ে তোমার এই পায়ের তলাটিতে এসে ঠেকেছি। এখান থেকে আর নড়তে পারব না।
ঠাকুরদাদা। এ কী হল! লখা গেরুয়া ধরেছে যে!
লক্ষেশ্বর। সন্ন্যাসীঠাকুর, এবার আর কথা নেই। আমি তোমারই চেলা। এই নাও আমার গজমোতির কৌটো; এই আমার মণিমাণিক্যের পেটিকা তোমারই কাছে রইল। দেখো ঠাকুর, সাবধানে রেখো।
সন্ন্যাসী। তোমার এমন মতি কেন হল লক্ষেশ্বর?
লক্ষেশ্বর। সহজে হয় নি প্রভু! সম্রাট বিজয়াদিত্যের সৈন্য আসছে। এবার আমার ঘরে কি আর কিছু থাকবে? তোমার গায়ে তো কেউ হাত দিতে পারবে না, এ-সমস্ত তোমার কাছেই রাখলেম। তোমার চেলাকে তুমি রক্ষা কোরো বাবা, আমি তোমার শরণাগত।
রাজা। সন্ন্যাসীঠাকুর!
সন্ন্যাসী। বোসো বোসো, তুমি যে হাঁপিয়ে পড়েছ! একটু বিশ্রাম করো।
রাজা। বিশ্রাম করবার সময় নেই। ঠাকুর, চরের মুখে সংবাদ পাওয়া গেল যে, বিজয়াদিত্যের পতাকা দেখা দিয়েছে—তাঁর সৈন্যদল আসছে।
সন্ন্যাসী। বল কী! বোধ হয় শরৎকালের আনন্দে তাঁকে আর ঘরে টিঁকতে দেয় নি, তিনি রাজ্যবিস্তার করতে বেরিয়েছেন!
রাজা। কী সর্বনাশ! রাজ্যবিস্তার করতে বেরিয়েছেন!
সন্ন্যাসী। বাবা, এতে দুঃখিত হলে চলবে কেন? তুমিও তো রাজ্যবিস্তার করবার জন্যে বেরোবার উদ্যোগে ছিলে।
রাজা। না, সে হল স্বতন্ত্র কথা। তাই বলে আমার এই রাজ্যটুকুতে—তা, সে যাই হোক, আমি তোমার শরণাগত! এই বিপদ হতে আমাকে বাঁচাইতে হবে, বোধ হয় কোনো দুষ্টলোক তাঁর কাছে লাগিয়েছে যে আমি তাঁকে লঙ্ঘন করতে ইচ্ছা করেছি! তুমি তাঁকে বোলো সে কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা, সর্বৈব মিথ্যা! আমি কি এমনি উন্মত্ত! আমার রাজচক্রবর্তী হবার দরকার কী! আমার শক্তিই বা এমন কী আছে!
সন্ন্যাসী। ঠাকুর্দা!
ঠাকুরদাদা। কী প্রভু?
সন্ন্যাসী। দেখো, আমি কৌপীন প’রে এবং গুটিকতক ছেলেকে মাত্র নিয়ে শারদোৎসব কেমন জমিয়ে তুলেছিলেম, আর ওই চক্রবর্তী-সম্রাটটা তার সমস্ত সৈন্যসামন্ত নিয়ে এমন দুর্লভ উৎসব কেবল নষ্টই করতে পারে! লোকটা কিরকম দুর্ভাগা দেখেছ!
রাজা। চুপ করো, চুপ করো ঠাকুর! কে আবার কোন্ দিক থেকে শুনতে পাবে!
সন্ন্যাসী। ওই বিজয়াদিত্যের ’পরে আমার—
রাজা। আরে চুপ, চুপ! তুমি সর্বনাশ করবে দেখছি! তাঁর প্রতি তোমার মনের ভাব যাই থাক্ সে তুমি মনেই রেখে দাও।