Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
প্রকৃতির প্রতিশোধ - একাদশ দৃশ্য, ২৯
প্রকৃতির প্রতিশোধ
প্রতিদিন যেন আমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া
জগৎ-চক্রের মাঝে যেতেছি পড়িতে —
চারি দিকে জড়াইছে অশ্রুর বাঁধন,
প্রতিদিন কমিতেছে চরণের বল।
জগৎ-চক্রের মাঝে যেতেছি পড়িতে —
চারি দিকে জড়াইছে অশ্রুর বাঁধন,
প্রতিদিন কমিতেছে চরণের বল।
যাক্ ছিঁড়ে! গেল ছিঁড়ে! চল্ ছুটে চল্!
চল্ দূরে — যত দূরে চলে রে চরণ।
কে ও আসে অশ্রুনেত্রে শূন্যগুহা-মাঝে,
কে ও রে পশ্চাতে ডাকে 'পিতা পিতা' ব'লে!
ছিঁড়ে ফেল্,ভেঙে ফেল্ চরণের বাধা —
হেথা হতে চল্ ছুটে, আর দেরি নয়।
চল্ দূরে — যত দূরে চলে রে চরণ।
কে ও আসে অশ্রুনেত্রে শূন্যগুহা-মাঝে,
কে ও রে পশ্চাতে ডাকে 'পিতা পিতা' ব'লে!
ছিঁড়ে ফেল্,ভেঙে ফেল্ চরণের বাধা —
হেথা হতে চল্ ছুটে, আর দেরি নয়।
একাদশ দৃশ্য
পথে সন্ন্যাসী
সন্ন্যাসী। এসেছি অনেক দূরে — আর ভয় নাই।
পায়েতে জড়াল লতা, ছিন্ন হয়ে গেল।
সেই মুখ বার বার জাগিতেছে মনে।
সে যেন করুণ মুখে মনের দুয়ারে
বসে বসে কাঁদিতেছে ডাকিতেছে সদা!
যতই রাখিতে চাই দুয়ার রুধিয়া —
কিছুতেই যাবে না সে, ফিরে ফিরে আসে,
একটু মনের মাঝে স্থান পেতে চায়।
নির্ভয়ে গা ঢেলে দিয়ে সংসারের স্রোতে
এরা সবে কী আরামে চলেছে ভাসিয়া।
যে যাহার কাজ করে, গৃহে ফিরে যায়,
ছোটো ছোটো সুখে দুঃখে দিন যায় কেটে।
আমি কেন দিবানিশি প্রাণপণ করে
যুঝিতেছি সংসারের স্রোত-প্রতিকূলে।
পেরেছি কি এক তিল অগ্রসর হতে!
সেই মুখ বার বার জাগিতেছে মনে।
সে যেন করুণ মুখে মনের দুয়ারে
বসে বসে কাঁদিতেছে ডাকিতেছে সদা!
যতই রাখিতে চাই দুয়ার রুধিয়া —
কিছুতেই যাবে না সে, ফিরে ফিরে আসে,
একটু মনের মাঝে স্থান পেতে চায়।
নির্ভয়ে গা ঢেলে দিয়ে সংসারের স্রোতে
এরা সবে কী আরামে চলেছে ভাসিয়া।
যে যাহার কাজ করে, গৃহে ফিরে যায়,
ছোটো ছোটো সুখে দুঃখে দিন যায় কেটে।
আমি কেন দিবানিশি প্রাণপণ করে
যুঝিতেছি সংসারের স্রোত-প্রতিকূলে।
পেরেছি কি এক তিল অগ্রসর হতে!