টেক্কানী। কেন।
দহলানী। পদোন্নতি ঘটে, মাটিতে পা পড়ে না। এ-সমস্তই তাসের ঢঙ। এঁকে দেওয়া, সাজিয়ে দেওয়া কায়দা।
ইস্কাবনী। এ তো দেখি পবনদেবের উলটোপালটা খেলা— তাসীরা হতে চায় রঙ খসিয়ে মানুষ, মানুষ চায় রঙ মেখে তাসী হতে। আমি কিন্তু, ভাই, ঠিক করেছি, মানুষের মন্তর নেব রাজপুত্তুরের কাছে।
টেক্কানী। আমিও।
দহলানী। আমারও ইচ্ছে করে, কিন্তু ভয়ও করে। শুনেছি মানুষের দুঃখ ঢের, তাসের কোনো বালাই নেই।
ইস্কাবনী। দুঃখের কথা বলছিস, ভাই? দুঃখ যে এখনি শুরু করেছে তার নৃত্য বুকের মধ্যে।
টেক্কানী। কিন্তু, সেই দুঃখের নেশা ছাড়তে চাই নে। থেকে থেকে চোখ জলে ভেসে যায়, কেন যে ভেবেই পাই নে।
মন কেন এমন করে—
যেন সহসা কী কথা মনে পড়ে,
মনে পড়ে না গো, তবু মনে পড়ে।
যেন কাহার বচন দিয়েছে বেদন,
যেন কে চলে গিয়েছে অনাদরে—
বাজে তারি অযতন প্রাণের ‘পরে।
যেন সহসা কী কথা মনে পড়ে,
মনে পড়ে না গো, তবু মনে পড়ে।
ইস্কাবনী। পালাও পালাও, সম্পাদক আসছে। কাগজে যদি রটে যায় তা হলে মুখ দেখাতে পারব না।
দহলানী। ঐ-যে দলবল সবাই আসছে। বুড়োনিমতলায় আজ সভা বসবে। এখানে আর নয়।
রাজা। এ জায়গাটা কেমন ঠেকছে। ওটা কিসের গন্ধ।
পঞ্জা। কদম্বের।
রাজা। কদম্ব! অদ্ভুত নাম। ওটা কী পাখি ডাকছে।
পঞ্জা। শুনেছি, ওকে বলে ঘুঘু।
রাজা। ঘুঘু! তাসের ভাষায় ওকে একটা ভদ্র নাম দাও, বলো বিন্তি।– আজ তো কাজ করা দায় হয়েছে। আজ আকাশে কথা শোনা যাচ্ছে, বাতাসে সুর উঠেছে। অনেক কষ্টে মনকে শান্ত রেখেছি। রানীবিবিকে তো ঘরে রাখা শক্ত হল, নেচে বেড়াচ্ছে ভূতে-পাওয়ার মতো। সভ্যগণ, তোমাদের আজ চেনা যায় না— সভার সাজ নেই, অত্যন্ত অসভ্যের মতো।
সকলে। দোষ নেই। ঢিলে হয়ে গেল আমাদের সাজ, আপনি পড়ল খসে— সেগুলো রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে আছে।
রাজা। সম্পাদক, তোমারও যেন গাম্ভীর্যহানি হয়েছে বলে বোধ হচ্ছে।