দ্বিতীয় পথিক। কুম্ভ, তোমার ঐ মুখের দোষেই তুমি মরবে।
কুম্ভ। না ভাই মাধব, ও মুখের দোষ নয়, ও কপালের দোষ। যে বারে মিছে রাজা বেরোল একটি কথাও কই নি, অত্যন্ত ভালোমানুষের মতো নিজের সর্বনাশ করেছি; আর এবার হয়তো-বা সত্যি রাজা বেরিয়েছে, তাই বেফাঁস কথাটা মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল। ওটা কপাল।
মাধব। আমি এই বুঝি, রাজা সত্যি হোক মিথ্যে হোক মেনে চলতেই হবে। আমরা কি রাজা চিনি যে বিচার করব! অন্ধকারে ঢেলা মারা— যত বেশি মারবে একটা-না-একটা লেগে যাবে। আমি ভাই এক-ধার থেকে গড় করে যাই— সত্যি হলে লাভ; মিথ্যে হলেই-বা লোকসান কী।
কুম্ভ। ঢেলাগুলো নেহাত ঢেলা হলে ভাবনা ছিল না— দামী জিনিস— বাজে খরচ করতে গিয়ে ফতুর হতে হয়।
মাধব। ঐ-যে আসছেন রাজা। আহা, রাজার মতো রাজা বটে! কী চেহারা! যেন ননির পুতুল। কেমন হে কুম্ভ, এখন কী মনে হচ্ছে।
কুম্ভ। দেখাচ্ছে ভালো— কী জানি ভাই, হতে পারে।
মাধব। ঠিক যেন রাজাটি গড়ে রেখেছে। ভয় হয় পাছে রোদ্দুর লাগলে গলে যায়।
মাধব। জয় মহারাজের! দর্শনের জন্যে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে। দয়া রাখবেন।
কুম্ভ। বড়ো ধাঁদা ঠেকছে, ঠাকুরদাকে ডেকে আনি।
প্রথম পথিক। ওরে, রাজা রে, রাজা! দেখবি আয়।
দ্বিতীয় পথিক। মনে রেখো রাজা, আমি কুশলীবস্তুর উদয়দত্তর নাতি। আমার নাম বিরাজদত্ত। রাজা বেরিয়েছে শুনেই ছুটেছি, লোকের কারও কথায় কান দিই নি— আমি সক্কলের আগে তোমাকে মেনেছি।
তৃতীয় পথিক। শোনো একবার, আমি যে ভোর থেকে এখানে দাঁড়িয়ে— তখনো কাক ডাকে নি— এতক্ষণ ছিলে কোথায়। রাজা, আমি বিক্রমস্থলীর ভদ্রসেন, ভক্তকে স্মরণ রেখো।
রাজবেশী। তোমাদের ভক্তিতে বড়ো প্রীত হলেম।
বিরাজদত্ত। মহারাজ, আমাদের অভাব বিস্তর। এতদিন দর্শন পাই নি, জানাব কাকে?
রাজবেশী। তোমাদের সমস্ত অভাব মিটিয়ে দেব।
প্রথম পথিক। ওরে, পিছিয়ে থাকলে চলবে না— ভিড়ে মিশে গেলে রাজার চোখে পড়ব না।
দ্বিতীয় পথিক। দেখ্ দেখ্, একবার নরোত্তমের কাণ্ডখানা দেখ্। আমরা এত লোক আছি— সবাইকে ঠেলেঠুলে কোথা থেকে এক তালপাতার পাখা নিয়ে রাজাকে বাতাস করতে লেগে গেছে।
মাধব। তাই তো হে, লোকটার আস্পর্ধা তো কম নয়!
দ্বিতীয় পথিক। ওকে জোর করে ধরে সরিয়ে দিতে হচ্ছে— ও কি রাজার পাশে দাঁড়াবার যুগ্যি।