সন্ন্যাসী। উপনন্দ, ওই যে পরদেশী এসেছে— ওকে দেখে তোমার মনে হয় না কি, তোমার আচার্য সুরসেনেরই ও জুড়ি?
উপনন্দ। আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন তাঁরই বীণা শুনছি।
সন্ন্যাসী। তুমি যেমন তাঁকে পেয়েছিলে তেমনি করেই এই মানুষটিকে পাবে।
উপনন্দ। উনি কি আমাকে নেবেন?
সন্ন্যাসী। ওর মুখ দেখেই কি বুঝতে পার নি?
উপনন্দ। পেরেছি। আমার প্রভুই বুঝি ওঁকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
লক্ষেশ্বর। আ সর্বনাশ! যেখানটিতে আমি কৌটো পুঁতে রেখেছিলুম ঠিক সেই জায়গাটিতেই যে উপনন্দ বসে গেছে! আমি ভেবেছিলেম ছোঁড়াটা বোকা বুঝি তাই পরের ঋণ শুধতে এসেছে। তা তো নয় দেখছি। পরের ঘাড় ভাঙাই ওর ব্যাবসা। আমার গজমোতির খবর পেয়েছে। একটা সন্ন্যাসীকেও কোথা থেকে জুটিয়ে এনেছে দেখছি। সন্ন্যাসী হাত চেপে জায়গাটা বের করে দেবে। উপনন্দ!
উপনন্দ। কী।
লক্ষেশ্বর। ওঠ্ ওঠ্ ঐ জায়গা থেকে। এখানে কী করতে এসেছিস?
উপনন্দ। অমন করে চোখ রাঙাও কেন? এ কি তোমার জায়গা না কি?
লক্ষেশ্বর। এটা আমার জায়গা কি না সে খোঁজে তোমার দরকার কী হে বাপু। ভারি সেয়ানা দেখছি! তুমি বড়ো ভালোমানুষটি সেজে আমার কাছে এসেছিলে। আমি বলি সত্যিই বুঝি প্রভুর ঋণশোধ করবার জন্যেই ছোঁড়াটা আমার কাছে এসেছে –কেননা, সেটা রাজার আইনেও আছে –
উপনন্দ। আমি তো সেইজন্যেই এখানে পুঁথি লিখতে এসেছি।
লক্ষেশ্বর। সেইজন্যেই এসেছ বটে! আমার বয়স কত আন্দাজ করছ বাপু। আমি কি শিশু।
সন্ন্যাসী। কেন বাবা, তুমি কী সন্দেহ করছ?
লক্ষেশ্বর। কী সন্দেহ করছি! তুমি তা কিছু জান না! বড়ো সাধু! ভণ্ড সন্ন্যাসী কোথাকার।
ঠাকুরদাদা। আরে কী বলিস লখা? আমার ঠাকুরকে অপমান!
উপনন্দ। এই রঙ-বাঁটা নোড়া দিয়ে তোমার মুখ গুঁড়িয়ে দেব-না। টাকা হয়েছে বলে অহংকার। কাকে কী বলতে হয় জান না!
সন্ন্যাসী। আরে কর কী ঠাকুরদা, কর কী বাবা। লক্ষেশ্বর তোমাদের চেয়ে ঢের বেশি মানুষ চেনে। যেমনি দেখেছে অমনি ধরা পড়ে গেছে। ভণ্ড সন্ন্যাসী যাকে বলে! বাবা লক্ষেশ্বর, এত দেশের এত মানুষ ভুলিয়ে এলেম, তোমাকে ভোলাতে পারলেম না।
লক্ষেশ্বর। না, ঠিক ঠাওরাতে পারছি নে। হয়তো ভালো করি নি। আবার শাপ দেবে কি কী করবে! তিনখানা জাহাজ এখনো সমুদ্রে আছে। (পায়ের ধুলা লইয়া) প্রণাম হই ঠাকুর! হঠাৎ চিনতে পারি নি। বিরূপাক্ষের মন্দিরে আমাদের ওই বিকটানন্দ বলে একটা সন্ন্যাসী আছে আমি বলি সেই ভণ্ডটাই বুঝি! ঠাকুরদা, তুমি এক কাজ করো। সন্ন্যাসী ঠাকুরকে আমার ঘরে নিয়ে যাও,