Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
ভগ্নহৃদয় - প্রথম সর্গ, ৬
ভগ্নহৃদয়
এ বন আঁধার ঘোর ভালো লাগিবে না তোর,
তুই কুঞ্জবনে, সখি, কর্ গিয়ে খেলা!
তুই কুঞ্জবনে, সখি, কর্ গিয়ে খেলা!
চপলা। মনে আছে, অনিলের ফুলশয্যা আজ?
তুই হেথা বসে র’বি, কত আছে কাজ!
কত ভোরে উঠে বনে গেছি ছুটে,
মাধবীরে লয়ে ডাকি,
ডালে ডালে যত ফুল ছিল ফুটে
একটি রাখি নি বাকি!
শিশিরে ভিজিয়ে গিয়েছে আঁচল,
কুসুমরেণুতে মাখা।
কাঁটা বিঁধে, সখি, হয়েছিনু সারা
নোয়াতে গোলাপ-শাখা!
তুলেছি করবী গোলাপ-গরবী,
তুলেছি টগরগুলি,
যুঁইকুঁড়ি যত বিকেলে ফুটিবে
তখন আনিব তুলি।
আয়, সখি, আয়, ঘরে ফিরে আয়,
অনিলে দেখ্সে আজ—
হরষের হাসি অধরে ধরে না,
কিছু যদি আছে লাজ!
মুরলা। আহা সখি, বড়ো তারা ভালোবাসে দুই জনে!
চপলা। হাঁ সখি, এমন আর দেখি নি তো বর-কোনে!
জানিস্ তো, সখি, ললিতার মতো
অমন লাজুক মেয়ে
অনিলের সাথে দেখা করিবারে
প্রতিদিন যায় বিপাশার ধারে
সরমের মাথা খেয়ে!
কবরীতে বাঁধি কুসুমের মালা,
নয়নে কাজলরেখা,
চুপি চুপি যায়, ফিরে ফিরে চায়,
বনপথ দিয়ে একা!
দূর হতে দেখি অনিলে অমনি