সন্ন্যাসী। এই ঋণশোধের ছবি আমি দেখে নিলেম ওই উপনন্দের মধ্যে। ওই তো প্রেমের ঋণ প্রেম দিয়ে শুধছে। উপনন্দকে তুমি দেখেছ?
শেখর। হাঁ তাকে দেখে নিয়েছি, বুঝেও নিয়েছি। ছেলেদের মুখে উপনন্দ আর ঠাকুরদা এই দুই নাম বাজছে। তাদের কাছ থেকে ওর সব খবর পেলুম।
সন্ন্যাসী। ওকে সবাই ভালোবাসে, কেননা ও যে দুঃখের শোভায় সুন্দর।
শেখর। ঠাকুর, যদি তাকিয়ে দেখ তবে দেখবে সব সুন্দরই দুঃখের শোভায় সুন্দর। এই যে ধানের খেত আজ সবুজ ঐশ্বর্যে ভরে উঠেছে এর শিকড়ে শিকড়ে পাতায় পাতায় ত্যাগ। মাটি থেকে জল থেকে হাওয়া থেকে যা-কিছু ও পেয়েছে সমস্তই আপন প্রাণের ভিতর দিয়ে একেবারে নিংড়ে নিয়ে মঞ্জরীতে মঞ্জরীতে উৎসর্গ করে দিলে। তাই তো চোখ জুড়িয়ে গেল।
সন্ন্যাসী। ঠিক বলেছ উদাসী, প্রেমের আনন্দে উপনন্দ দুঃখের ভিতর দিয়ে জীবনের ভরা খেতের ফসল ফলিয়ে তুললে।
শেখর। ঐ দুঃখের রতনমালা বিশ্বের কণ্ঠে ঝলমল করছে।
দুখের অশ্রুধার।
জননী গো, গাঁথব তোমার
গলার মুক্তাহার।
চন্দ্রসূর্য পায়ের কাছে
মালা হয়ে জড়িয়ে আছে,
তোমার বুকে শোভা পাবে আমার
দুখের অলংকার।
ধনধান্য তোমারি ধন
কী করবে তা কও,
দিতে চাও তে দিয়ো আমায়,
নিতে চাও তো লও।
দুঃখ আমার ঘরের জিনিস,
খাঁটি রতন তুই তো চিনিস,
তোর প্রসাদ দিয়ে তারে কিনিস,
এ মোর অহংকার॥
লক্ষেশ্বর। এই যে, এ লোকটি এখানে এসে জুটেছে। (চোখ টিপিয়া) ঠাকুরদা, এঁকে চিনতে পেরেছ কি, ইনি একজন সন্ধানী লোক।
শেখর। সেইজন্যেই তো তোমাকে ছেড়ে এখন এঁকে ধরেছি।