Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
ভগ্নহৃদয় - পঞ্চম সর্গ, ৩৪
ভগ্নহৃদয়
পঞ্চম সর্গ
কানন
রাত্রি
অনিল ললিতা। নলিনী ও সখীগণ। বিজয় সুরেশ বিনোদ প্রমোদ অশোক নীরদ
কাননের এক পাশে ললিতার প্রতি অনিলের গান
কাননের এক পাশে ললিতার প্রতি অনিলের গান
বউ! কথা কও!
সারাদিন বনে বনে ভ্রমিছি আপন মনে,
সন্ধ্যাকালে শ্রান্ত বড়ো— বউ, কথা কও!
শুন লো, বকুল-ডালে লুকায়ে পল্লবজালে
পিক-সহ পিকবধূ মুখে মুখ মিলায়ে
দু জনেতে এক প্রাণ গাহিতেছে এক গান,
রাশি রাশি স্বরসুধা বাতাসেরে বিলায়ে।
সারাদিন তপনের কিরণেতে তাপিয়া
সন্ধ্যাকালে নীড়ে ফিরে আসিয়াছে পাপিয়া।
প্রিয়ারে না দেখি তার ঢালিতেছে স্বরধার
অধীর বিলাপ তার লতাপাতা-ভিতরে,
গলি সে আকুল ডাকে বসি অতি দূর-শাখে
প্রাণের বিহগী তার ’যাই যাই উতরে।
অতি উচ্চ শাখে উঠি দেখ লো কপোত দুটি
মুখে মুখে কানে কানে কত কথা বলিছে,
বুকে বুক মিলাইয়া চঞ্চুপুট বুলাইয়া,
কপোতী সে কপোতের আদরেতে গলিছে!
এস প্রিয়ে, এস তবে মধুর— মধুর রবে
জুড়াও শ্রবণ মোর— বউ! কথা কও!
যদি বড়ো হয় লাজ আমার বুকের মাঝ
পাখার ভিতরে মুখ লুকাও তোমার!
অতি ধীরে মৃদু-মধু বুকের কাছেতে, বধূ,
দু-চারিটি কথা শুধু বলো একবার!
সারাদিন বনে বনে ভ্রমিছি আপন মনে,
সন্ধ্যাকালে শ্রান্ত বড়ো— বউ, কথা কও!
শুন লো, বকুল-ডালে লুকায়ে পল্লবজালে
পিক-সহ পিকবধূ মুখে মুখ মিলায়ে
দু জনেতে এক প্রাণ গাহিতেছে এক গান,
রাশি রাশি স্বরসুধা বাতাসেরে বিলায়ে।
সারাদিন তপনের কিরণেতে তাপিয়া
সন্ধ্যাকালে নীড়ে ফিরে আসিয়াছে পাপিয়া।
প্রিয়ারে না দেখি তার ঢালিতেছে স্বরধার
অধীর বিলাপ তার লতাপাতা-ভিতরে,
গলি সে আকুল ডাকে বসি অতি দূর-শাখে
প্রাণের বিহগী তার ’যাই যাই উতরে।
অতি উচ্চ শাখে উঠি দেখ লো কপোত দুটি
মুখে মুখে কানে কানে কত কথা বলিছে,
বুকে বুক মিলাইয়া চঞ্চুপুট বুলাইয়া,
কপোতী সে কপোতের আদরেতে গলিছে!
এস প্রিয়ে, এস তবে মধুর— মধুর রবে
জুড়াও শ্রবণ মোর— বউ! কথা কও!
যদি বড়ো হয় লাজ আমার বুকের মাঝ
পাখার ভিতরে মুখ লুকাও তোমার!
অতি ধীরে মৃদু-মধু বুকের কাছেতে, বধূ,
দু-চারিটি কথা শুধু বলো একবার!
[কিছুক্ষণ থামিয়া] তবে কি কবে না কথা, পূরাবে না আশা?
ভালো ভালো, কোয়ো নাকো, মুখ ফিরাইয়া থাকো,