Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
ভগ্নহৃদয় - ষষ্ঠ সর্গ, ৪৬
ভগ্নহৃদয়
নিশীথবাতাস লাগি মনে কত উঠে জাগি
নিস্তব্ধ জোছনারাতে ভাবনার ভার!
[স্বগত] আহা কি করুণ, সখা, হৃদয় তোমার!
কবি গো! বুক যে যায়— ভেঙে যায়, ফেটে যায়—
অশ্রুজল রুধিবারে পারিনাক আর!
পারি নে— পারি নে সখা, পারি নে গো আর!
ভেঙে বুঝি ফেলে তারা মর্ম্মকারাগার!
একবার পায় ধরে কেঁদে নিই প্রাণ ভরে—
একবার শুধু, কবি, শুধু একবার!
যুঝিছে বুকের মাঝে শত অশ্রুধার!
নিস্তব্ধ জোছনারাতে ভাবনার ভার!
[স্বগত] আহা কি করুণ, সখা, হৃদয় তোমার!
কবি গো! বুক যে যায়— ভেঙে যায়, ফেটে যায়—
অশ্রুজল রুধিবারে পারিনাক আর!
পারি নে— পারি নে সখা, পারি নে গো আর!
ভেঙে বুঝি ফেলে তারা মর্ম্মকারাগার!
একবার পায় ধরে কেঁদে নিই প্রাণ ভরে—
একবার শুধু, কবি, শুধু একবার!
যুঝিছে বুকের মাঝে শত অশ্রুধার!
কবি। একটি প্রাণের কথা রয়েছে গোপনে,
বলিব বলিব তোরে করিতেছি মনে!
আজ জোছনার রাতে বিপাশার তীরে
কাছে আয়, সে কথাটি বলি ধীরে ধীরে!
আজ জোছনার রাতে বিপাশার তীরে
কাছে আয়, সে কথাটি বলি ধীরে ধীরে!
মুরলা। কি কথা সে? বলো কবি! করহ প্রকাশ!
কবি। কে জানে উঠেছে হৃদে কিসের উচ্ছ্বাস!
কবি। কে জানে উঠেছে হৃদে কিসের উচ্ছ্বাস!
খেলিছে মর্ম্মের মাঝে অধীর উল্লাস!
অথচ, উল্লাস সেই সুকুমার হেন,
শিশিরের বাষ্প দিয়ে গঠিত সে যেন!
হৃদয়ে উঠেছে যেন বন্যা জোছনার,
মধুর অশান্তিময় হৃদয় আমার।
সূক্ষ্ম আবরণ, গাঁথা সন্ধ্যামেঘস্তরে,
পড়িয়াছে যেন মোর নয়নের ’পরে!
কিছু যেন দেখেও দেখে না আঁখিদ্বয়,
সকলি অস্ফুট, যেন সন্ধ্যাবর্ণময়!
শোন্ বলি, মুরলা লো, আরো আয় কাছে—
শূন্য এ হৃদয় মোর ভালো বাসিয়াছে!
অথচ, উল্লাস সেই সুকুমার হেন,
শিশিরের বাষ্প দিয়ে গঠিত সে যেন!
হৃদয়ে উঠেছে যেন বন্যা জোছনার,
মধুর অশান্তিময় হৃদয় আমার।
সূক্ষ্ম আবরণ, গাঁথা সন্ধ্যামেঘস্তরে,
পড়িয়াছে যেন মোর নয়নের ’পরে!
কিছু যেন দেখেও দেখে না আঁখিদ্বয়,
সকলি অস্ফুট, যেন সন্ধ্যাবর্ণময়!
শোন্ বলি, মুরলা লো, আরো আয় কাছে—
শূন্য এ হৃদয় মোর ভালো বাসিয়াছে!
মুরলা। ভালোবাসে? কারে কবি? কারে সখা? কারে?
কবি। মধুর নলিনী-সম নলিনী বালারে!
মুরলা। নলিনী? নলিনী সখা! নলিনী বালারে?
কবি। মধুর নলিনী-সম নলিনী বালারে!
মুরলা। নলিনী? নলিনী সখা! নলিনী বালারে?
কবি মোর! সখা মোর! ভালোবাস তারে?
কবি। হাঁ মুরলা, সেই নলিনী বালারে,