Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
মালিনী - চতুর্থ দৃশ্য, ২৯
মালিনী
জীবনের সব কথা বলেছি তোমারে,
শুধু, সেই কথা আছে বাকি।
যেই দিন
বিদ্বেষ উঠিল গর্জি দয়াধর্মহীন
তোমারে ঘেরিয়া চারি দিকে, একাকিনী
দাঁড়াইয়া পূর্ণ মহিমায়, কী রাগিণী
বাজাইলে! বংশীরবে যেন মন্ত্রাহত
বিদ্রোহ করিল আসি ফণা অবনত
তব পদতলে। শুধু বিপ্র ক্ষেমংকর
রহিল পাষাণচিত্ত, অটল-অন্তর।
একদা ধরিয়া কর কহিল সে মোরে—
‘বন্ধু, আমি চলিলাম দূর দেশান্তরে।
আনিয়া বিদেশী সৈন্য বরুণার কূলে
নবধর্ম উৎপাটন করিব সমূলে
পুণ্য কাশী হতে।’ চলি গেল রিক্ত হাতে
অজ্ঞাত ভুবনে। শুধু লয়ে গেল সাথে
আমার হৃদয়, আর, প্রতিজ্ঞা কঠোর।
শুধু, সেই কথা আছে বাকি।
যেই দিন
বিদ্বেষ উঠিল গর্জি দয়াধর্মহীন
তোমারে ঘেরিয়া চারি দিকে, একাকিনী
দাঁড়াইয়া পূর্ণ মহিমায়, কী রাগিণী
বাজাইলে! বংশীরবে যেন মন্ত্রাহত
বিদ্রোহ করিল আসি ফণা অবনত
তব পদতলে। শুধু বিপ্র ক্ষেমংকর
রহিল পাষাণচিত্ত, অটল-অন্তর।
একদা ধরিয়া কর কহিল সে মোরে—
‘বন্ধু, আমি চলিলাম দূর দেশান্তরে।
আনিয়া বিদেশী সৈন্য বরুণার কূলে
নবধর্ম উৎপাটন করিব সমূলে
পুণ্য কাশী হতে।’ চলি গেল রিক্ত হাতে
অজ্ঞাত ভুবনে। শুধু লয়ে গেল সাথে
আমার হৃদয়, আর, প্রতিজ্ঞা কঠোর।
তার পরে জান তুমি কী ঘটিল মোর।
লভিলাম যেন আমি নবজন্মভূমি
যেদিন এ শুষ্ক চিত্তে বরষিলে তুমি
সুধাবৃষ্টি। ‘সর্ব জীবে দয়া’ জানে সবে—
অতি পুরাতন কথা— তবু এই ভবে
এই কথা বসি আছে লক্ষবর্ষ ধরি
সংসারের পরতীরে। তারে পার করি
তুমি আজি আনিয়াছ সোনার তরীতে
সবার ঘরের দ্বারে। হৃদয়-অমৃতে
স্তন্যদান করিয়াছ সে দেবশিশুরে,
লয়েছে সে নবজন্ম মানবের পুরে
তোমারে মা ব’লে। স্বর্গ আছে কোন্ দূরে,
কোথায় দেবতা— কে বা সে সংবাদ জানে
শুধু জানি বলি দিয়া আত্ম-অভিমানে
বাসিতে হইবে ভালো, বিশ্বের বেদনা
লভিলাম যেন আমি নবজন্মভূমি
যেদিন এ শুষ্ক চিত্তে বরষিলে তুমি
সুধাবৃষ্টি। ‘সর্ব জীবে দয়া’ জানে সবে—
অতি পুরাতন কথা— তবু এই ভবে
এই কথা বসি আছে লক্ষবর্ষ ধরি
সংসারের পরতীরে। তারে পার করি
তুমি আজি আনিয়াছ সোনার তরীতে
সবার ঘরের দ্বারে। হৃদয়-অমৃতে
স্তন্যদান করিয়াছ সে দেবশিশুরে,
লয়েছে সে নবজন্ম মানবের পুরে
তোমারে মা ব’লে। স্বর্গ আছে কোন্ দূরে,
কোথায় দেবতা— কে বা সে সংবাদ জানে
শুধু জানি বলি দিয়া আত্ম-অভিমানে
বাসিতে হইবে ভালো, বিশ্বের বেদনা