Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
ভগ্নহৃদয় - ত্রয়োদশ সর্গ, ৮৫
ভগ্নহৃদয়
ত্রয়োদশ সর্গ
অনিল ও ললিতা
ললিতা। ভেঙেছে ভেঙেছে যত লজ্জা ললিতার।
মুক্তকণ্ঠে শুধাইছে, সখা, বার বার—
কি করিব বলো দেখি তোমার লাগিয়া?
কি করিলে জুড়াইতে পারিব ও হিয়া?
এই পেতে দিনু বুক— রাখ, সখা, রাখ মুখ—
ঘুমাও তুমি গো, আমি রহিব জাগিয়া!
খুলে বলো, বলো সখা, কি দুঃখ তোমার!
অশ্রুজলে মিশাইব অশ্রুজলধার।
একদিন বলেছিলে মোর ভালোবাসা
পেলেই পুরিবে তব প্রণয়পিপাসা!
বলেছিলে সব তব করিছে নির্ভর
পৃথিবীর সুখ দুঃখ আমারি উপর।
কই সখা? প্রাণ মন করেছি তো সমর্পণ,
দিয়েছি তো যাহা কিছু ছিল আপনার—
তবু কেন শুকাল না অশ্রুবারিধার?
কি করিব বলো দেখি তোমার লাগিয়া?
কি করিলে জুড়াইতে পারিব ও হিয়া?
এই পেতে দিনু বুক— রাখ, সখা, রাখ মুখ—
ঘুমাও তুমি গো, আমি রহিব জাগিয়া!
খুলে বলো, বলো সখা, কি দুঃখ তোমার!
অশ্রুজলে মিশাইব অশ্রুজলধার।
একদিন বলেছিলে মোর ভালোবাসা
পেলেই পুরিবে তব প্রণয়পিপাসা!
বলেছিলে সব তব করিছে নির্ভর
পৃথিবীর সুখ দুঃখ আমারি উপর।
কই সখা? প্রাণ মন করেছি তো সমর্পণ,
দিয়েছি তো যাহা কিছু ছিল আপনার—
তবু কেন শুকাল না অশ্রুবারিধার?
অনিল। ললিতা রে, ললিতা রে, আমার কিসের দুখ
হৃদয়ে জাগিছে যবে ওই তোর মধুমুখ!
জীবননিশীথ মোর ও রবিকিরণে তোর
একেবারে মিশায়েছি আপনারে পাশরিয়া—
মাঝে মাঝে হৃদাকাশে যদিও বা মেঘ আসে,
ভিতরে তবুও হাসে সে রবিকিরণ প্রিয়া!
ওই স্মিথ আঁখি দুটি হৃদয়ে রহিয়া ফুটি
রেখেছে ফুল ফুটায়ে প্রাণের বিজন বনে!
তব প্রেমসুধাধারা ঝরিয়া নির্ঝর-পারা
তুলেছে হরিত করি এই মরুভূমি-মনে।
তব হাসি জ্যোৎস্না-সম এ মুগ্ধ নয়নে মম
সারা জগতের মুখে ফুটায়ে রেখেছে হাসি।
তুমি সদা আছ কাছে তাই দিবালোক আছে,
নহিলে জগতে মোর কাঁদিত আঁধাররাশি।
জীবননিশীথ মোর ও রবিকিরণে তোর
একেবারে মিশায়েছি আপনারে পাশরিয়া—
মাঝে মাঝে হৃদাকাশে যদিও বা মেঘ আসে,
ভিতরে তবুও হাসে সে রবিকিরণ প্রিয়া!
ওই স্মিথ আঁখি দুটি হৃদয়ে রহিয়া ফুটি
রেখেছে ফুল ফুটায়ে প্রাণের বিজন বনে!
তব প্রেমসুধাধারা ঝরিয়া নির্ঝর-পারা
তুলেছে হরিত করি এই মরুভূমি-মনে।
তব হাসি জ্যোৎস্না-সম এ মুগ্ধ নয়নে মম
সারা জগতের মুখে ফুটায়ে রেখেছে হাসি।
তুমি সদা আছ কাছে তাই দিবালোক আছে,
নহিলে জগতে মোর কাঁদিত আঁধাররাশি।