Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
ভগ্নহৃদয় - অষ্টাদশ সর্গ, ১০০
ভগ্নহৃদয়
এ জগতে যত নিবাসী জনের
নাহিক রোদন হাসি—
সকলেই চায় সকলের মুখে,
শুধায় না কেহ কথা—
নাইক আলয়, চলেছে সকলে
মন যার যায় যেথা!
নাহিক রোদন হাসি—
সকলেই চায় সকলের মুখে,
শুধায় না কেহ কথা—
নাইক আলয়, চলেছে সকলে
মন যার যায় যেথা!
অষ্টাদশ সর্গ
ললিতা
আদর করিয়া কেন না পাই আদর?
লজ্জা নাই কিছু নাই, না ডাকিতে কাছে যাই—
সংকোচে চরণ যেন করে থর থর—
ধীরে ধীরে এক পাশে বসি পদতলে!
বড়ো মনে সাধ যায় মুখখানি তুলে চায়,
বারেক হাসিয়া কাছে বসিবারে বলে!
বড়ো সাধ কাছে গিয়ে মুখখানি তুলে নিয়ে
চাপিয়া ধরি গো এই বুকের মাঝার,
মুখপানে চেয়ে চেয়ে কাঁদি একবার!
সে কেন বারেক চেয়ে কথাও না কয়,
পাষাণে গঠিত যেন, স্থির হয়ে রয়!
যেন রে ললিতা তার কেহ নয়— কেহ নয়—
দাসীর দাসীও নয়, পথের পথিকো নয়!
যেন একবারে কেহ— কেহ নাই কাছে,
ভাবনা লইয়া তার একেলা সে আছে!
কি যেন দেখিছে ছবি আকাশের পটে,
মুহূর্তের তরে যেন মনে মনে ভাবে হেন—
“ললিতা এসেছে বুঝি, বসেছে নিকটে,
সে এমন মাঝে মাঝে এসে থাকে বটে!”
মাঝে মাঝে আসে বটে, পারে না সে নাথ—
সখা গো, নিতান্ত তাই কথাটি শুধাতে নাই?
বারেক করিতে নাই স্নেহনেত্রপাত?
লজ্জা নাই কিছু নাই, না ডাকিতে কাছে যাই—
সংকোচে চরণ যেন করে থর থর—
ধীরে ধীরে এক পাশে বসি পদতলে!
বড়ো মনে সাধ যায় মুখখানি তুলে চায়,
বারেক হাসিয়া কাছে বসিবারে বলে!
বড়ো সাধ কাছে গিয়ে মুখখানি তুলে নিয়ে
চাপিয়া ধরি গো এই বুকের মাঝার,
মুখপানে চেয়ে চেয়ে কাঁদি একবার!
সে কেন বারেক চেয়ে কথাও না কয়,
পাষাণে গঠিত যেন, স্থির হয়ে রয়!
যেন রে ললিতা তার কেহ নয়— কেহ নয়—
দাসীর দাসীও নয়, পথের পথিকো নয়!
যেন একবারে কেহ— কেহ নাই কাছে,
ভাবনা লইয়া তার একেলা সে আছে!
কি যেন দেখিছে ছবি আকাশের পটে,
মুহূর্তের তরে যেন মনে মনে ভাবে হেন—
“ললিতা এসেছে বুঝি, বসেছে নিকটে,
সে এমন মাঝে মাঝে এসে থাকে বটে!”
মাঝে মাঝে আসে বটে, পারে না সে নাথ—
সখা গো, নিতান্ত তাই কথাটি শুধাতে নাই?
বারেক করিতে নাই স্নেহনেত্রপাত?