চন্দ্রসেন। কী বল তুমি! এ তো সামান্য আত্মীয়কলহ। দাও তাঁর কাছে ধরা, চাও তাঁর স্নেহ ও ক্ষমা, হাসিমুখে সমস্ত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
কুমারসেন। খুড়োমহারাজ, তর্ক করবার সময় নেই, শেষবার জিজ্ঞাসা করি— রাজধানী থেকে সৈন্য পাব না?
চন্দ্রসেন। রাজধানী! বিদ্রূপ করছ? শুনেছি ঐ আখরোটবনেই কাশ্মীরের রাজধানী। তোমার আদেশ এইখান থেকেই ঘোষণা কোরো। আমাকে তো কোনো প্রয়োজন নেই। আমি বিদায় হই।
সকলে। ধিক্ ধিক্। নিপাত যাও। কোটি জন্ম তোমার নরকবাস হোক। সিংহাসনের কীট, সিংহাসনকে জীর্ণ করে তার ধূলির মধ্যে তোমার বিলুপ্তি ঘটুক।
কুমারসেন। স্তব্ধ হও। শোনো। জালন্ধর কাশ্মীর আক্রমণে এসেছেন, আমাকে একলা লড়তে হবে।
সকলে। মহারাজ, ন্যায় তোমার পক্ষে, ধর্ম তোমার পক্ষে, সমস্ত কাশ্মীরের হৃদয় তোমার পক্ষে। জয় মহারাজা কুমারসেনের জয়! ধিক্ ধিক্ চন্দ্রসেনকে শত শত শত ধিক্।
কুমারসেন। চুপ করো, বৃথা উত্তেজনায় বলক্ষয় কোরো না। এখনই যাও সৈন্য সংগ্রহ করো গে।
সকলে। আর অভিষেক?
কুমারসেন। নাইবা হল অভিষেক।
সকলে। সে হবে না, মহারাজ, সে হবে না। চন্দ্রসেনের চক্রান্ত শেষে সফল হবে! এ কিছুতেই পারব না সইতে। আমরা আছি, সৈন্যসংগ্রহের আয়োজনে এখনই চললুম। কিন্তু উৎসব চলুক, অনুষ্ঠান শেষ হোক।
কুমারসেন। ভয় নেই, মন্দিরে দেবসাক্ষী করে তীর্থোদকে একমুহূর্তে আমার অভিষেক হয়ে যাবে। যদি ফিরে আসি উৎসব সম্পূর্ণ করব। কিন্তু তোমরা যাও। আর বিলম্বে নয়।
সকলে। জয় মহারাজ, কুমারসেনের জয়। ধিক্ চন্দ্রসেন। ধিক্ ধিক্ ধিক্।
১। মহারাজ, আর সময় নেই। পালাতে হবে।
কুমারসেন। কেন।
১। জালন্ধরের সৈন্য অন্ধমুনির মাঠ পর্যন্ত এসেছে, পালানো ছাড়া এখন আর উপায় নেই। চলো, শম্ভুপ্রস্থের বনে আমি পথ জানি।
২। এইমাত্র-যে খুড়োমহারাজ এসেছিলেন।
১। চাতুরী, চাতুরী। শত্রুপক্ষকে তিনি নিজে সন্ধান বাতলিয়েছেন।
২। গ্রামে গ্রামে লোক গেছে সৈন্য জোগাড় করতে, কিন্তু সময় তো পাওয়া গেল না। এরা যুদ্ধ করতেও দিলে না রে।
৩। এ-যে বেড়া আগুন, কিছুই করতে পারব না, মরব শুধু। অসহ্য!
১। জালন্ধরের পাপিষ্ঠরা একেই বলে যুদ্ধ করা। এ তো মানুষ খুন করা!