Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
ভগ্নহৃদয় -ঊনত্রিংশ সর্গ, ১২৭
ভগ্নহৃদয়
তবুও কেন লো থাকে না সে!
ছিল তো আমার রূপরাশ
একেবারে পেলে কি বিনাশ?
সংসারে কেবলই তবে রূপের কাঙাল সবে?
কচি মুখানির সবে দাস?
ভালোবাসা ব’লে কিছু নাই?
স্বার্থপর পুরুষ সবাই?
চির-আত্মবিসর্জন করে যে ভকতমন
হেন মন কোথা, সখি, পাই?
মুখেরই রাজত্ব যদি ভবে
এ মুখ সাজায়ে দে লো তবে!
ছিল তো আমার রূপরাশ
একেবারে পেলে কি বিনাশ?
সংসারে কেবলই তবে রূপের কাঙাল সবে?
কচি মুখানির সবে দাস?
ভালোবাসা ব’লে কিছু নাই?
স্বার্থপর পুরুষ সবাই?
চির-আত্মবিসর্জন করে যে ভকতমন
হেন মন কোথা, সখি, পাই?
মুখেরই রাজত্ব যদি ভবে
এ মুখ সাজায়ে দে লো তবে!
ঊনত্রিংশ সর্গ
ললিতা
সংসারের পথে পথে মরীচিকা অন্বেষিয়া
ভ্রমিয়া হয়েছি ক্লান্ত নিদারুণ কোলাহলে—
তাই বলি একবার আমারে ঘুমাতে দাও—
শীতল করি এ হৃদি বিরামের স্নিগ্ধ জলে!
শ্রান্ত এ জীবনে মোর আসুক নিশীথকাল,
বিস্মৃতি-আঁধারে ডুবি ভুলি সব দুখজ্বালা,
নিঃস্বপ্ন নিদ্রার কোলে ঘুমাতে গিয়াছে সাধ,
মিশাতে মহাসমুদ্রে জীবনের স্রোতোমালা?
শরীর অবশ অতি— নয়ন মুদিয়া আসে
মৃত্যুর দ্বারের কাছে বসিয়া সন্ধ্যার বেলা,
চৌদিকে সংসার-পানে মাঝে মাঝে চেয়ে দেখি—
আধ’ স্বপ্নে আধ’ জেগে দেখি গো মায়ার খেলা!
কত শত লোক আছে— কেহ কাঁদে, কেহ হাসে,
কেহ ঘৃণা করে, কেহ প্রাণপণে ভালোবাসে—
একটি কথার তরে কেহ-বা কাঁদিয়া মরে,
একটি চাহনি-তরে চেয়ে আছে কত মাস—
একটি হাসির ঘায়ে কেহ-বা কাঁদিয়া উঠে,
ভ্রমিয়া হয়েছি ক্লান্ত নিদারুণ কোলাহলে—
তাই বলি একবার আমারে ঘুমাতে দাও—
শীতল করি এ হৃদি বিরামের স্নিগ্ধ জলে!
শ্রান্ত এ জীবনে মোর আসুক নিশীথকাল,
বিস্মৃতি-আঁধারে ডুবি ভুলি সব দুখজ্বালা,
নিঃস্বপ্ন নিদ্রার কোলে ঘুমাতে গিয়াছে সাধ,
মিশাতে মহাসমুদ্রে জীবনের স্রোতোমালা?
শরীর অবশ অতি— নয়ন মুদিয়া আসে
মৃত্যুর দ্বারের কাছে বসিয়া সন্ধ্যার বেলা,
চৌদিকে সংসার-পানে মাঝে মাঝে চেয়ে দেখি—
আধ’ স্বপ্নে আধ’ জেগে দেখি গো মায়ার খেলা!
কত শত লোক আছে— কেহ কাঁদে, কেহ হাসে,
কেহ ঘৃণা করে, কেহ প্রাণপণে ভালোবাসে—
একটি কথার তরে কেহ-বা কাঁদিয়া মরে,
একটি চাহনি-তরে চেয়ে আছে কত মাস—
একটি হাসির ঘায়ে কেহ-বা কাঁদিয়া উঠে,