Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
ভগ্নহৃদয় -ত্রিংশ সর্গ, ১২৮
ভগ্নহৃদয়
একটি হেরিয়া অশ্রু কারও মুখে ফুটে হাস!
কেহ বসে, কেহ ওঠে— কেহ থাকে, কেহ যায়—
জীবনের খেলা দেখি মরণের দ্বারে শুয়ে—
হাসি নাই, অশ্রু নাই——সুখ নাই, দুঃখ নাই—
হাসি অশ্রু সুখ দুখ দেখিতেছি চেয়ে চেয়ে।
শুধু শ্রান্তি, শুধু শ্রান্তি— আর কিছু, কিছু নহে—
নহে তৃষা, নহে শোক, নহে ঘৃণা, ভালোবাসা—
দারুণ শ্রান্তির পরে আসে যে দারুণ ঘুম
সেই ঘুম ঘুমাইব— আর কোন নাই আশা!
কেহ বসে, কেহ ওঠে— কেহ থাকে, কেহ যায়—
জীবনের খেলা দেখি মরণের দ্বারে শুয়ে—
হাসি নাই, অশ্রু নাই——সুখ নাই, দুঃখ নাই—
হাসি অশ্রু সুখ দুখ দেখিতেছি চেয়ে চেয়ে।
শুধু শ্রান্তি, শুধু শ্রান্তি— আর কিছু, কিছু নহে—
নহে তৃষা, নহে শোক, নহে ঘৃণা, ভালোবাসা—
দারুণ শ্রান্তির পরে আসে যে দারুণ ঘুম
সেই ঘুম ঘুমাইব— আর কোন নাই আশা!
ত্রিংশ সর্গ
নলিনী
বড়ো সাধ গেছে মনে ভালোবাসিবারে
সখি, তোরা বল্ দেখি ভালোবাসি কারে?
বসন্তে নিকুঞ্জবনে বেষ্টিত সহস্র মনে
নলিনী প্রাণের খেলা শুধু খেলিয়াছে,
খেলা ছাড়া সত্যকার জীবন কি আছে?
সে জীবন দেখিবারে বড়ো সাধ গেছে?
মনেতে মিশায়ে মন সচেতনে অচেতন
জগত হইয়া আসে মৃদুছায়াময়,
দুটি মন চেয়ে থাকে, দোঁহে দোঁহা ঢেকে রাখে—
সজনি লো, সে বড়ো সুখের মনে হয়।
সে সুখ কি পাই যদি ভালোবাসি কারে?
বড়ো সাধ যায়, সখি, ভালোবাসিবারে!
এত যে হৃদয় আছে, ভ্রমে নলিনীর কাছে—
নলিনীর নহে কি গো একটিও তার?
যদি কারও দ্বারে যাই, কাঁদিয়া আশ্রয় চাই,
কেহই কি খুলিবে না হৃদয়ের দ্বার?
হৃদয়ের দুয়ারের বাহিরে বসিয়া
খেলেছি মনের খেলা সকলে মিলিয়া—
সিংহাসন নিরমিত’, আমারে বসায়ে দিত,
সখি, তোরা বল্ দেখি ভালোবাসি কারে?
বসন্তে নিকুঞ্জবনে বেষ্টিত সহস্র মনে
নলিনী প্রাণের খেলা শুধু খেলিয়াছে,
খেলা ছাড়া সত্যকার জীবন কি আছে?
সে জীবন দেখিবারে বড়ো সাধ গেছে?
মনেতে মিশায়ে মন সচেতনে অচেতন
জগত হইয়া আসে মৃদুছায়াময়,
দুটি মন চেয়ে থাকে, দোঁহে দোঁহা ঢেকে রাখে—
সজনি লো, সে বড়ো সুখের মনে হয়।
সে সুখ কি পাই যদি ভালোবাসি কারে?
বড়ো সাধ যায়, সখি, ভালোবাসিবারে!
এত যে হৃদয় আছে, ভ্রমে নলিনীর কাছে—
নলিনীর নহে কি গো একটিও তার?
যদি কারও দ্বারে যাই, কাঁদিয়া আশ্রয় চাই,
কেহই কি খুলিবে না হৃদয়ের দ্বার?
হৃদয়ের দুয়ারের বাহিরে বসিয়া
খেলেছি মনের খেলা সকলে মিলিয়া—
সিংহাসন নিরমিত’, আমারে বসায়ে দিত,