Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
ভগ্নহৃদয় -ত্রয়স্ত্রিংশ সর্গ, ১৩৪
ভগ্নহৃদয়
মুরলা। কি যে সুখ পেতেছি তা বলিব কি ক’রে—
বলো সখা, এখনি কি যাব আমি ম’রে?
এই মরণের দিন না যদি ফুরায়
মরিতে মরিতে যদি বেঁচে থাকা যায়—
দিন যায়, দিন যায়, মাস চলে যায়,
তবু মরণের দিন না যদি ফুরায়!
সখা ওগো, দাও মোরে, দাও মোরে জল—
সুখেতে হয়েছি শ্রান্ত, অতি দুরবলো।
এই মরণের দিন না যদি ফুরায়
মরিতে মরিতে যদি বেঁচে থাকা যায়—
দিন যায়, দিন যায়, মাস চলে যায়,
তবু মরণের দিন না যদি ফুরায়!
সখা ওগো, দাও মোরে, দাও মোরে জল—
সুখেতে হয়েছি শ্রান্ত, অতি দুরবলো।
কবি। বিবাহ হইবে, সখি, আজ আমাদের—
দারুণ বিরহ ওই আসিবার আগে, সই,
অনন্ত মিলন হোক এই দুজনের!
আকাশেতে শত তারা চাহিয়া নিমেষহারা,
উহারা অনন্ত সাক্ষী রবে বিবাহের!
আজি এই দুটি প্রাণ হইল অভেদ,
মরণে সে জীবনের হবে না বিচ্ছেদ।
হোক তবে, হোক, সখি, বিবাহ সুখের—
চিতায় বাসরশয্যা হোক আমাদের!
অনন্ত মিলন হোক এই দুজনের!
আকাশেতে শত তারা চাহিয়া নিমেষহারা,
উহারা অনন্ত সাক্ষী রবে বিবাহের!
আজি এই দুটি প্রাণ হইল অভেদ,
মরণে সে জীবনের হবে না বিচ্ছেদ।
হোক তবে, হোক, সখি, বিবাহ সুখের—
চিতায় বাসরশয্যা হোক আমাদের!
মুরলা। তবে তুলে আন ত্বরা রাশি রাশি ফুল!
চিতাশয্যা হোক আজি কুসুমে আকুল!
রজনীগন্ধার মালা গাঁথ গো ত্বরায়,
সে মালা বদল করি দিও এ গলায়—
সেই মালা প’রে আমি তোমার সমুখে, স্বামি,
করিব শয়ন সুখে সুখের চিতায়!
সেই মালা প’রে যেন দগ্ধ হয় কায়!
রজনীগন্ধার মালা গাঁথ গো ত্বরায়,
সে মালা বদল করি দিও এ গলায়—
সেই মালা প’রে আমি তোমার সমুখে, স্বামি,
করিব শয়ন সুখে সুখের চিতায়!
সেই মালা প’রে যেন দগ্ধ হয় কায়!
অনিলের ফুল আনিতে প্রস্থান
কবি গো, বড়োই সাধ ছিল মনে মনে
এক দিন কেঁদে নেব ধরি ও চরণে—
দেখি, কবি, পা-দুখানি দেখি একবার,
বড়ো সাধ গেছে মনে সুখে কাঁদিবার!
কই, ফুল এল না তো, আসিবে কখন?
এখনি ফুরায়ে পাছে যায় এ জীবন!
আরো কাছে এসো কবি, আরো কাছে মোর—
এক দিন কেঁদে নেব ধরি ও চরণে—
দেখি, কবি, পা-দুখানি দেখি একবার,
বড়ো সাধ গেছে মনে সুখে কাঁদিবার!
কই, ফুল এল না তো, আসিবে কখন?
এখনি ফুরায়ে পাছে যায় এ জীবন!
আরো কাছে এসো কবি, আরো কাছে মোর—