রমেন। তখন সরলাকে জানতুম না তাই আমার কাছে এখনকার সরলাই সত্য।
নীরজা। ওর এখনকার চেহারা হৃদয়ের কোন্ একটা রহস্যে ভরে উঠেছে —যেন যে মেঘ ছিল সাদা তার ভিতর থেকে শ্রাবণের জল আজ ঝরি-ঝরি করছে— একেই তোমরা রোম্যাণ্টিক বলো, না ঠাকুরপো!
নীরজা। সরলা, একটু রোসো।— ঠাকুরপো, একবার পুরুষমানুষের চোখ দিয়ে সরলাকে দেখে নিই। ওর কী সকলের আগে তোমাদের চোখে পড়ে বলো দেখি!
রমেন। সমস্তটাই একসঙ্গে।
নীরজা। নিশ্চয়ই ওর চোখ দুটো, কেমন একরকম মিষ্টি করে চাইতে জানে। না, উঠো না সরলা। আর-একটু বোসো। ওর দেহটাও কেমন নিরেট নিটোল।
রমেন। তুমি কি ওকে নীলেম করতে বসেছ না কি বউদি? জানোই তো অমনিতেই আমার উৎসাহের কিছু কমতি নেই।
নীরজা। ঠাকুরপো, দেখো সরলার হাত-দুখানি, যেমন জোরালো তেমনি সুডোল, কোমল, তেমনি তার শ্রী। এমনটি আর দেখেছ?
রমেন। (হেসে) আর কোথাও দেখেছি কি না তার উত্তরটা তোমার মুখের সামনে রূঢ় শোনাবে।
নীরজা। অমন দুটি হাতের ’পরে দাবি করবে না?
রমেন। চিরদিনের দাবি নাই করলেম, ক্ষণে ক্ষণে দাবি করে থাকি। তোমাদের ঘরে যখন চা খেতে আসি তখন চায়ের চেয়ে বেশি কিছু পাই ঐ হাতের গুণে। সেই রসগ্রহণে পাণিগ্রহণের যেটুকু সম্পর্ক থাকে অভাগার পক্ষে সেই যথেষ্ট।
সরলা। কী বলো!
রমেন। আজ শুক্লা চতুর্দশী, আমি মুসাফির আসব তোমার বাগিচায়, কথা যদি থাকে তবু কইবার দরকারই হবে না। আকাল পড়েছে, পেট ভরে দেখাই জোটে না। হঠাৎ এই ঘরে মুষ্টিভিক্ষার দেখা— এ মঞ্জুর নয়। আজ তোমাদের গাছতলায় বেশ একটু রয়ে বসে মনটা ভরিয়ে নিতে চাই।
সরলা। আচ্ছা এসো তুমি।
রমেন। (খাটের কাছে ফিরে এসে) তবে আসি বউদি।
নীরজা। আর থাকবার দরকার কী? বউদির যে কাজটুকু ছিল সে তো সারা হল।
নীরজা। রোশনি, শুনে যা।