সরলা। থাক্ থাক্, যাকে মেনে নিতেই হবে তাকে না মানবার জন্য ঝগড়া করছ কার সঙ্গে? কী হবে মিথ্যে ছটফট করে? কাল দিনের বেলায় যা হয় একটা উপায় স্থির করা যাবে।
আদিত্য। আচ্ছা চুপ করলুম। কিন্তু এমন জ্যোৎস্নারাত্রে আমার হয়ে কথা কইবে এমন কিছু রেখে যাব তোমার কাছে।
আমি জানি নাগকেশর তুমি ভালোবাস। তোমার কাঁধের ঐ আঁচলের উপর পরিয়ে দেব? এই এনেছি সেফটিপিন।
সরলা উঠে দাঁড়াল, আদিত্য সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত ধরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল—
কী আশ্চর্য তুমি সরি, কী আশ্চর্য!
দাঁড়িয়ে দেখলে। তার পরে বসে পড়ল সেই ঘাটের বেদীর ’পরে।
চাকর। খাবার এসেছে।
আদিত্য। আজ আমি খাব না।
নীরজার ঘর। ঘরের সব আলো নেবানো। জানলা খোলা। জ্যোৎস্না পড়েছে বিছানায়, পড়েছে নীরজার মুখে, আর শিয়রের কাছে আদিত্যের দেওয়া সেই ল্যাবার্নম গুচ্ছের উপর। বাকি সমস্ত অস্পষ্ট। বালিশে হেলান দিয়ে নীরজা অর্ধেক উঠে বসে আছে, চেয়ে আছে জানালার বাইরে। সেদিকে অর্কিডের ঘর পেরিয়ে দেখা যাচ্ছে সুপুরিগাছের সার। এইমাত্র হাওয়া জেগেছে, দুলে উঠছে পাতাগুলো। মেঝের উপর পড়ে আছে থালায় বরফি আর কিছু আবির। দরজার কাছ থেকে রমেন জিজ্ঞাসা করল—
রমেন। বউদি, ডেকেছ কি?
নীরজা। (রুদ্ধ গলা পরিষ্কার করে) এসো।
"রমেন মোড়া টেনে এনে বসল বিছানার পাশে। নীরজা অনেকক্ষণ কোনো কথা বললে না। তার ঠোঁট কাঁপতে লাগল যেন বেদনার ঝড় পাক খেয়ে উঠছে। কিছু পরে সামলে নিলে, ল্যাবার্নম গুচ্ছের দুটো খসে-পড়া ফুল দলিত হয়ে গেল তার মুঠোর মধ্যে। তার পরে কোনো কথা না বলে একখানা চিঠি দিলে রমেনের হাতে। রমেন পত্রখানি পড়তে লাগল-
“এতদিনের পরিচয়ের পরে আজ হঠাৎ দেখা গেল আমার নিষ্ঠায় সন্দেহ করা সম্ভবপর হল তোমার পক্ষে। এ নিয়ে যুক্তিতর্ক করতে লজ্জা বোধ করি। তোমার মনের বর্তমান অবস্থায় আমার সকল কথা সকল কাজই বিপরীত হবে তোমার অনুভবে। সেই অকারণ পীড়ন তোমার দুর্বল শরীরকে আঘাত করবে প্রতি মুহূর্তে। আমার পক্ষে দূরে থাকাই ভালো যে পর্যন্ত না তোমার মন সুস্থ হয়। এও বুঝলুম সরলাকে এখানকার কাজ থেকে বিদায় করে দিই এই তোমার ইচ্ছা। হয়তো দিতে হবে। ভেবে দেখলুম তা ছাড়া আর অন্য পথ নেই। তবু বলে রাখি আমার শিক্ষা দীক্ষা উন্নতি সমস্তই সরলার জ্যাঠামশায়ের প্রসাদে। আমার জীবনে সার্থকতার পথ