সরলা। ও কী, এখনি এলে যে বড়ো?
আদিত্য। দু-একটা কথা বলতে বলতেই নীরজা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল, আমি আস্তে আস্তে চলে এলুম।
রমেন। আমার কাজ আছে— চললুম।
সরলা। (হেসে) বাসা ঠিক করে রেখো, ভুলো না।
রমেন। কোনো ভয় নেই। চেনা জায়গা।
সরলা। (আদিত্যের প্রতি) যে-সব কথা বলবার নয় সে আমাকে বোলো না আজ, পায়ে পড়ি।
আদিত্য। কিছু বলব না, ভয় নেই।
সরলা। আচ্ছা, তা হলে আমিই কিছু বলতে চাই শোনো, বলো কথা রাখবে।
আদিত্য। অরক্ষণীয় না হলে কথা নিশ্চয় রাখব তুমি তা জানো।
সরলা। বুঝতে বাকি নেই আমি কাছে থাকলে একবারেই চলবে না। এই সময়ে দিদির সেবা করতে পারলে খুশি হতুম, কিন্তু সে আমার ভাগ্যে সইবে না। আমাকে অনুপস্থিত থাকতেই হবে। একটু থামো, কথাটা শেষ করতে দাও! শুনেইছ ডাক্তার বলেছেন বেশি দিন ওঁর সময় নেই। এইটুকুর মধ্যে ওঁর মনের কাঁটা তোমাকে উপড়ে দিতেই হবে। এই কয়দিনের মধ্যে আমার ছায়া কিছুতেই পড়তে দিয়ো না ওঁর জীবনে।
আদিত্য। আমার মন থেকে আপনিই ছায়া যদি পড়ে, তবে কী করতে পারি?
সরলা। না না, নিজের সম্বন্ধে অমন অশ্রদ্ধার কথা বোলো না। সাধারণ বাঙালি ছেলের মতো ভিজে মাটির তলতলে মন কি তোমার? কক্ষনো না, আমি তোমাকে জানি।
আমার হয়ে এই ব্রতটি তুমি নাও। দিদির জীবনান্তকালের শেষ কটা দিন দাও তোমার দাক্ষিণ্যে পূর্ণ করে। একেবারে ভুলিয়ে দাও যে আমি এসেছিলেম ওঁর সৌভাগ্যের ভরা ঘট ভেঙে দেবার জন্য।
কথা দাও ভাই।
আদিত্য। দেব কিন্তু তোমাকেও একটা কথা দিতে হবে। বলো রাখবে?
সরলা। তোমার সঙ্গে আমার তফাত এই যে, আমি যদি তোমাকে কিছু প্রতিজ্ঞা করাই সেটা সাধ্য, কিন্তু তুমি যদি করাও সেটা হয়তো অসম্ভব হবে।
আদিত্য। না, হবে না।
সরলা। আচ্ছা, বলো।
আদিত্য। যে কথা মনে মনে বলি সে কথা তোমার কাছে মুখে বলতে অপরাধ নেই। তুমি যা বলছ তা শুনব এবং সেটা বিনা ত্রুটিতে পালন করা সম্ভব হবে যদিও নিশ্চিত জানি একদিন তুমি পূর্ণ করবে আমার সমস্ত শূন্যতা। কেন চুপ করে রইলে?